অভিভাবকের মতো কারও কাছ থেকে ব্রিফিং দরকার

রুমি আহমেদ খান।
রুমি আহমেদ খান।
>

রুমি আহমেদ খান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক। মেডিসিনের (রেসপিরেটরি ও আইসিইউ) সহযোগী অধ্যাপক। ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। গতকাল সোমবার টেলিফোনে তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

প্রথম আলো: শীতপ্রধান দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বেশি ঝুঁকিতে, আমরা গরমের দেশ বলে ঝুঁকি কম? আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলেছেন।

রুমি আহমেদ খান: শীতের সঙ্গে সম্পর্ক একটা আছে। বেশি শীতে এটা বেশি ছড়ায়। এবং গরম আবহাওয়ায় এটা হয়তো শীতের মতো বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু এটা অত্যন্ত সংক্রামক। তাই অল্প সময়ে বেঁচে থাকার সামান্য সুযোগ পেলেই এরা মানবদেহকে সংক্রমিত করে ফেলে। মানবদেহে ঢোকার পরে তারা একই তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে। কারণ, সব আবহাওয়ায় মানবদেহের তাপমাত্রা সমান। তাই গরম বলেই এটা বাড়বে না, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরম মিয়ামিতে। প্রায় একই রকম লুইজিয়ানায়। এই এলাকা দুটি যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ানকভাবে আক্রান্ত এলাকাগুলোর অন্যতম। সিঙ্গাপুরও ঠান্ডার দেশ নয়। মিয়ামিতে আজই (সোমবার) ১ হাজার ব্যক্তির পজিটিভ ফল এসেছে।

প্রথম আলো: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলেছেন, তিনি আগামী ৭ থেকে ১০ দিন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।

রুমি আহমেদ খান: আরও এক মাস আগে শুরু করা উচিত ছিল।

প্রথম আলো: আপনার হাসপাতালের অভিজ্ঞতা কী? সেখানে টেস্ট কীভাবে করছেন? এটা কি ঠিক যে একবার টেস্ট করায় ভরসা নেই। বাংলাদেশে একবার টেস্ট করেই বলা হচ্ছে তার দেহে কোভিড-১৯–এর জীবাণু নেই।

রুমি আহমেদ খান: এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনে রাখতে হবে, পিসিআর দিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী যে টেস্ট চলছে, তার শুদ্ধতার শতকরা হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এ কারণে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) আটলান্টার গাইডলাইনে দুধরনের পদ্ধতিতে পদ্ধতিতে নেগেটিভ শনাক্তকরণের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো পিসিআর দিয়ে। যে ক্ষেত্রে রোগী কোনো হটস্পট থেকে এসেছেন বা যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো স্পষ্ট, চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন কোভিড–১৯ সংক্রমণের সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার আমরা ‘আরটি পিসিআর’ করে থাকি। এ ধরনের যেসব রোগীর দুবার নেগেটিভ পেয়েছি, তাকে কোভিড–১৯ মুক্ত বলেছি। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যদি হাইরিস্ক এলাকার না হয়ে থাকেন, তার সিম্পটমের অন্য ব্যাখ্যা থাকে এবং অন্য সব বিষয়ের লক্ষণ রিপোর্টই ভালো থাকে, তাহলে তার জন্য টেস্টের ওপর নির্ভর না করেই নেগেটিভ বলা যায়। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর—সবাই অনেক ক্ষেত্রে দুবার করে টেস্ট করেছে। প্রথমবার নেগেটিভ এসেছে। রোগের লক্ষণ থাকলে ২৪ ঘণ্টা বিরতিতে নতুন করে নমুনা নিয়ে তাকে আবার পরীক্ষা করেছে তারা।

প্রথম আলো: আপনার নিজের ইউনিটে কতজন মারা গেছেন? তঁারা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন?

রুমি আহমেদ খান: পুরো সংখ্যাটা তো বলা যায় না, হিপা রেগুলেশন আছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত তিনজন মারা গেছেন। তাঁরা সবাই নার্সিং হোমে থাকা লোক। বয়স্ক। এটা লক্ষণীয় যে গোটা ফ্লোরিডায় যত লোক আক্রান্ত ও মারা গেছেন, তঁারা কোনো বিদেশি সূত্রের সংস্পর্শে আসেননি। শুধু ফ্লোরিডার প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি মিসর ভ্রমণ করেছিলেন। অধিকাংশ লোক নার্সিং হোমে বসবাস করছিলেন। আজও ২৯ জন পজিটিভ হাসপাতালে ভর্তি আছে। আরও ১৩৬ জন সন্দেহভাজন টেস্টের অপেক্ষায়।

প্রথম আলো: যেহেতু টেস্টই এই মুহূর্তের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই দুবার টেস্টের বিষয়টি আরেকটু বিস্তারিত ও নির্দিষ্ট করে ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়।

রুমি আহমেদ খান: গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিবিসির হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স করেসপনডেন্ট জেমস গালাঘার একটি প্রতিবেদন (করোনাভাইরাসের টেস্ট কি ত্রুটিপূর্ণ) করেছেন। এটি বলেছে, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, কাউকে চূড়ান্তভাবে করোনামুক্ত বলার আগে ছয়বার পর্যন্ত নেগেটিভ ফলাফল পেতে হয়েছে।

প্রথম আলো: ওই রিপোর্টে জার্নাল রেডিওলজির বরাতে বলা হয়েছে, যাদের ফুসফুস রুগ্‌ণ ও টেস্টে যাদের নেগেটিভ এসেছে, এ রকম ১৬৭ জনের মধ্যে ৫ জন প্রথমে নেগেটিভ হলেও পরে তারা পজিটিভ হয়েছে। ওই সমীক্ষা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

রুমি আহমেদ খান: অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। চীনা সাংবাদিকেরা এমন পজিটিভ রোগীও শনাক্ত করেছেন, যাদের ছয়বার নেগেটিভ আসার পরে সপ্তমবারে পজিটিভ এসেছে। দ্য হেলথ কেয়ার ব্লগে সৌরভ ঝা (এমডি) ২৯ মার্চ লিখেছেন, একটি চীনা সমীক্ষায় পিসিআর দিয়ে পরীক্ষার ফল শতকরা ৭০ ভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার মানে ১০০০ আক্রান্তের মধ্যে ৩০০ জন নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে কিন্তু ওরা আসলে আক্রান্ত ছিল। মার্কিন বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কি জনগণকে বলে দেওয়া উচিত যে একবার নেগেটিভ মানেই এক শ ভাগ নিশ্চিত নয়।

রুমি আহমেদ খান: এটা মানুষকে ভীত করবে, জনগণ ভুল বুঝবে। তবে অন্তত চিকিৎসকদের এটা জানা দরকার যে কারও ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাসপিশন (ডাক্তারি সংশয়) থাকলে নেগেটিভ টেস্টের ওপর খুব একটা বেশি গুরুত্ব না দিতে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে আইইডিসিআরের মুখপাত্র নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একধরনের আশ্বস্ত করছেন যে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা কম। রোববার ও সোমবার মোট ১৬২ জন সন্দেহভাজনের তারা পরীক্ষা করেছে। কারও দেহে পজিটিভ ধরা পড়েনি।

রুমি আহমেদ খান: বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে হারে পরীক্ষা চলছে, তাকে নিতান্ত অপ্রতুল বলেও বোঝানো যাবে না। এটা সিন্ধুতে এক বিন্দু পানি ফেলার চেয়েও কম। পরীক্ষার বিষয়টি কেবল সরকার সামলাতে পারবে না। তার একার হাতে রাখাও ঠিক হচ্ছে না। লকডাউন করতে গিয়ে বাংলাদেশ একটি গুরুতর ভুল করেছে। শহর ছিল বাংলাদেশের জন্য হটস্পট। গ্রামে এটা ধরা পড়েনি। শহর থেকে দলে দলে মানুষকে ছড়িয়ে পড়তে দিয়ে লকডাউন করা হয়েছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বিস্তৃত হয়েছে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে কী করতে হবে?

রুমি আহমেদ খান: প্রতিদিন ১০০ জন নয়, প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ব্যক্তির টেস্ট করাতে হবে।

প্রথম আলো: এটা বাস্তবে সম্ভব? বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৮৫ জনের টেস্ট করতে পেরেছে।

রুমি আহমেদ খান: দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ এটা করে দেখিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি খাতের ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারকে বসতে হবে। তাদের সব রকম সাহায্য দিতে হবে। তারা পারবে। দেশে যদি অনতিবিলম্বে ১০টি ল্যাবে একসঙ্গে প্রতিদিন ১০০ জনের টেস্ট শুরু করে, তাহলে সহজেই প্রতিদিনের টেস্ট সংখ্যা এক হাজারে উন্নীত করা সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বেসরকারি ল্যাবগুলোর এই ক্যাপাসিটি আছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন সবাই বেসরকারি খাতের সহায়তায় টেস্টিং ক্যাপাসিটি বাড়িয়েছে।

প্রথম আলো: এখন চিকিৎসা বিষয়ে বলুন। বুয়েটের প্রকৌশলী হাশমাতুজ্জামান একজন হাসপাতালবিষয়ক ইউটিলিটি প্রফেশনাল। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি হাসপাতাল বা আক্রান্ত ব্যক্তির বেডরুমকে নেগেটিভ প্রেশার ফ্লোর (যে রুমের বাতাস বাইরে যাবে না, শুধু ফিল্টার করা বাতাসই বাইরে যাবে) আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন।

রুমি আহমেদ খান: আমি তঁার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। বাংলাদেশের হাসপাতালে বা সাময়িক চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেগেটিভ প্রেশার ফ্লোর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটা করতে পারলে চিকিৎসাকেন্দ্র এবং সেখানে নিয়োজিত ডাক্তার-নার্সরা নিরাপদ থাকবেন। এটা এমনিতেও দরকার। কারণ, দেশে বহু টিবি রোগী আছে। এটা বাতাসবাহিত রোগ। অথচ টিবি রোগীদের চিকিৎসা দেশে নেগেটিভ প্রেশার ফ্লো–যুক্ত রুমে না রেখেই চলছে।

প্রথম আলো: রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশে ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে। এ ছাড়া সরকারি হিসাবে দেশে সরকারি হাসপাতালে ৪০০ ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭০০ আইসিইউ আছে। অথচ রক্ষণশীল হিসাবেও ২০ হাজার আইসিইউ শয্যা দরকার। উপরন্তু আইসিইউ

মানেই তাতে সব দরকারি উপাদান নেই। ভেন্টিলেটরের ঘাটতি প্রকট।

রুমি আহমেদ খান: সরকারি হাসপাতালের আইসিইউগুলো সারা বছর রোগীতে ভরা থাকে। করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে এটা যাদের লাগবে, তারা ৫ শতাংশের কম। সে ক্ষেত্রে কাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করতে হবে। অনেকের কাছে অসংবেদনশীল মনে হতে পারে, কিন্তু ৩০ বছর বয়সী বা একজন নবীনকে বাঁচাতেই আইসিইউর সমর্থনটা বেশি জরুরি বলে আমার কাছে মনে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আইসিইউর সঙ্গে অত্যন্ত দক্ষ লোকবল দরকার। তাদের প্রশিক্ষণ না দিলে শুধু আইসিইউ শয্যা বাড়িয়ে সুফল মিলবে না। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান, তারা আইসিইউ শয্যার সংখ্যা বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে। আসুন আমরা বাকি ৯৫ জনের কথা আগে ভাবি। আর সেই কারণেই আমি নেগেটিভ প্রেশার ফ্লো–যুক্ত চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি। এমন রুম স্থানীয় প্রকৌশলীরাই করে দিতে পারবেন।

প্রথম আলো: সরকার বলছে দেশে পর্যাপ্ত পিপিই ও

মাস্ক আছে। কিন্তু বাস্তবতা তা বলছে না। দেশের

চিকিৎসা সেবাদাতাদের সুরক্ষার বিষয়ে কিছু বলুন। আপনার নিজের অভিজ্ঞতা কী। বাংলাদেশি চিকিৎসকেরা কী করবেন?

রুমি আহমেদ খান: পিপিই অনেক ধরনের আছে। আমরা ওয়ান টাইম পিপিই ব্যবহার করি। আমি যখন রোগীর কাছে যাই, তখন আমার মুখে পি-১০০ মাস্ক থাকে। তবে সব মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক পি-১০০ পরেন না। তঁারা অনেকেই পরেন এন-৯৫। পি-১০০ মাস্ক আমরা ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুর সময় সংগ্রহ করেছিলাম। এই মাস্ক গ্যাসফিল্ডে ব্যবহার করা হয়। এর মানে হলো এই মাস্ক বাতাসে ভাসমান রোগীর নিঃসৃত কোনো দূষণ শতভাগ রোধ করতে পারে। কিন্তু এন-৯৫ কথাটির মানে হলো এই মাস্ক পরলে কোনো পার্টিকেল (জীবাণুদূষণ)
শূন্য দশমিক ৩ মাইক্রোনের চেয়ে বড় হলেই তা রোধ করতে পারে। কিন্তু এইটুকু ঘাটতি গ্রহণযোগ্য। তবে এটা বলব যে পিপিই, মাস্ক ইত্যাদির ব্যবহারে প্রশিক্ষণের দরকার আছে। আমি একটি আলোকচিত্র স্মরণ করতে পারি। একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক পিপিই পরে আছেন। কিন্তু তাঁর মাথার ক্যাপ যেটা দেখা যাচ্ছে, সেটা ক্যাপ নয়। সেটা জুতার কভার। পিপিই একজন রোগী পরিদর্শনে একবারই ব্যবহার করা সমীচীন। আমি তাই করছি। রোগীর রুম থেকে বেরিয়েই পিপিই বা অ্যাপ্রোনটিসহ মাথার হ্যাট ও শু কভার বিনে ফেলে দিই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত পি-১০০ মাস্কটি বারবার ব্যবহার করাও নিরাপদ।

প্রথম আলো: আপনি বাংলাদেশি নীতিনির্ধারকদের জন্য কতগুলো অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ উল্লেখ করতে পারেন।

রুমি আহমেদ খান: প্রথমেই আমি বলব, বাংলাদেশের একজন ড. অ্যান্থনি ফাউচি দরকার, যিনি প্রতিদিন জাতির সামনে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন। তিনি হবেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর চিকিৎসক সমাজের অভিভাবক হিসেবে একটা ভাবমূর্তি আছে। আইইডিসিআর একটি বিশেষায়িত ল্যাবরেটরি। তারা চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা শুধু তথ্য দিতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন দরকার তথ্যের হালনাগাদকরণসহ মতামতধর্মী বক্তব্য।

প্রথম আলো: ৩০ মার্চ সিএনএন বলল, ড. ফাউচি একটি মডেলের ভিত্তিতে রোববার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ বা তার বেশি লোক করোনায় মারা যেতে পারে। মানুষ কি তা বিশ্বাস করে?

রুমি আহমেদ খান: ড. ফাউচি গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। তিনি যখন যা–ই বলেন, সাধারণ মানুষ বা বিশেষজ্ঞরা তাতে আস্থা রাখেন।

প্রথম আলো: এটা কোন মডেল? লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের সেই মডেল, যার ভিত্তিতে বরিস জনসনের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক নিল ফার্গুসন আলোচনায় এসেছেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ কি ওই মডেলের ভিত্তিতেই যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশে পাঁচ লাখ লোকের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে?

রুমি আহমেদ খান: হ্যাঁ। এটি শুধুই একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন। ইম্পিরিয়াল কলেজ ও জনস হপকিন্সের মডেল গোটা বিশ্বের এপিডেমিওলজিস্টরা মেনে আসছেন। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।

প্রথম আলো: করোনায় সরকারের করণীয় তালিকাটা শেষ করুন।

রুমি আহমেদ খান: আগেই যেটা বলেছি, একটি জাতীয় টাস্কফোর্স লাগবে। তার প্রধান হিসেবে ড. ফাউচির মতো একজনকে দ্রুত বসাতে হবে। বর্তমানে যেভাবে ব্রিফিং চলছে, এতে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও গভীরতা ফুটে উঠছে না। একজন কেউ প্রতিদিন অভিভাবকের সুরে কিছু বলবেন, সবাই তা মানবে। ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে বসে জানতে হবে যে পাঁচ হাজার লোকের যদি ভেন্টিলেটর লাগে, তাহলে তার জন্য পর্যাপ্ত সিডেকটিভ ওষুধ দেশে মজুত আছে কি না। বিজিএমইএর সঙ্গে বসে উপযুক্ত পিপিই তৈরি করে নিতে হবে। সেই পিপিই স্বাস্থ্যকর্মীরা কী করে নিজেদের নিরাপদ রেখে পরবেন ও খুলবেন, তার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পিপিইর বিষয়ে আমদানি বা দানের মুখাপেক্ষী থাকা সমীচীন হবে না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন দরকার হবে। বাংলাদেশ অক্সিজেনের সঙ্গে বসে ঠিক করতে হবে যে তারা কীভাবে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। সবশেষে যেটায় বেশি জোর দেব সেটা হলো, দেশের সব হাসপাতালে যারা নিউমোনিয়া নিয়ে আসছে, তাদের ওপর বেশি মনোযোগ রাখা। আমরা এই অরল্যান্ডোতে কারও নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও যদি দেখি কারও নিউমোনিয়া আছে, তাহলে তাকে বলি পরদিন আবার আসতে। দ্বিতীয়বার টেস্ট করি।

প্রথম আলো: ১৯১৮ সালের সেই ভয়ংকর ফ্লু দীর্ঘ সময় টিকেছিল। এবার আপনারা এর স্থায়িত্ব বিষয়ে কী ভাবছেন?

রুমি আহমেদ খান: মহাযুদ্ধের কারণে সৈনিকেরা বাংকারে ছিলেন, তাঁরাই ছড়িয়েছিলেন। এবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আগামী জুনের মধ্যে এবারের প্রকোপ স্তিমিত হবে বলে আশা করছি।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

রুমি আহমেদ খান: ধন্যবাদ।