ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি

করোনাভাইরাস মোকাবিলার স্বার্থে সারা দেশে মানুষের চলাফেরা ন্যূনতম পর্যায়ে নামানোর চেষ্টা চলছে। প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের যেসব মানুষের জীবন চলে দৈনিক রোজগারের ভিত্তিতে, তাঁরা বেশ সংকটে পড়ে গেছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন, তাঁদের সংকট আরও গুরুতর। কারণ, নির্দিষ্ট সময় পরপর তাঁদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এখন যখন দৈনিক আহার জোগানোর পথই বন্ধ হয়ে গেছে, তখন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কীভাবে সম্ভব?

সরকার সাধারণ ছুটি ও প্রায় সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু দৈনিক রোজগারের ওপর নির্ভরশীল কয়েক কোটি মানুষের জীবন চলবে কীভাবে, এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। সাময়িকভাবে রোজগারহারা মানুষকে অনাহার-অর্ধাহার থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালন করছে না। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারী নিম্ন আয়ের মানুষের অন্তত ঋণের কিস্তি আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া উচিত। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোনো কোনো জেলা ও উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্থানীয়ভাবে এনজিওগুলোর প্রতি এমন অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ কিংবা আদেশ মানা হচ্ছে না বলে খবর বেরিয়েছে। অনেক এনজিওর কর্মীরা এ দুরবস্থার মধ্যেও ঋণ গ্রহণকারীদের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কেউ কেউ এই বলে ভয় দেখাচ্ছেন যে এখন কেউ কিস্তি পরিশোধ না করলে তিনি পরবর্তী সময়ে ঋণ পাবেন না।

এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ভ্যানগাড়ি কিনেছেন কিংবা ঋণের টাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন—এ ধরনের নানা পেশার নিম্ন আয়ের লোকজনের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থাগুলো তাঁদের এই দুর্দশা আমলে না নিয়ে কিস্তি আদায় অব্যাহত রেখেছে বলে দেশের কোনো কোনো স্থানে লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কিস্তি আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য কোথাও কোথাও ঋণগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে। যখন মানুষ ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে, তখন তাদের ওপর এই বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা অমানবিক বলে আমরা মনে করি। ক্ষুদ্রঋণদানকারী সব সংস্থার প্রতি আমাদের আহ্বান; আপনারা কিছু সময়ের জন্য ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত রাখুন। সরকারেরও উচিত হবে কেন্দ্রীয়ভাবে এ রকম একটি নির্দেশনা জারি করা।