ঢিলেঢালা সাধারণ ছুটি

করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এরপর এর মেয়াদ বাড়ানোর পর এখন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অফিস–আদালত বন্ধ থাকবে। এই পরিস্থিতিকে কার্যত একটি অঘোষিত ও শিথিল লকডাউন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং সন্দেহভাজন সংক্রমিত ব্যক্তিদের কতটা বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

এই প্রক্রিয়ার শুরুটাই ছিল সমস্যাপূর্ণ। ছুটি ঘোষণার পর দলে দলে মানুষ শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এতে সারা দেশে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আবার শুরুর দিকে জনগণ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘরে থাকলেও এখন আবার বের হতে শুরু করেছে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারটি ঢিলেঢালা থাকছে এবং পুরোপুরি লকডাউন বলতে যা বোঝায় তা বাংলাদেশে কার্যকর করা হয়নি। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কথা চিন্তা করে হয়তো কঠোর লকডাউন করা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই কৌশল কতটা কাজে দেবে? সাধারণ ছুটি কি আরও বাড়াতে হবে? দীর্ঘ ঢিলেঢালা সঙ্গনিরোধ নাকি নির্দিষ্ট সময়ে কঠোর লকডাউন, কোনটি বেশি কার্যকর?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। পশ্চিমের অনেক দেশ কঠোর লকডাউনের নীতি নিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত টানা তিন সপ্তাহের লকডাউনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশফেরত ও সন্দেহভাজন সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষা, রোগ শনাক্ত এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার কৌশল নিয়েছে। কঠোর লকডাউনের নীতি বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে। আবার লকডাউন এড়িয়ে ব্যাপক টেস্টের নীতিতে দক্ষিণ কোরিয়াও করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে।

আমরা উল্লিখিত দুটি কৌশলের কোনোটিকেই যথাযথভাবে গ্রহণ করিনি। আমরা পুরো লকডাউনও করিনি, আবার ব্যাপক টেস্টের নীতিও নিইনি। শুরুতে সবচেয়ে সহজ ছিল বিদেশফেরত প্রত্যেক নাগরিকের আইসোলেশন বা সঙ্গনিরোধ নিশ্চিত করা। করোনা সংক্রমণ না পাওয়া গেলে তঁারা ১৪-১৫ দিন পর বাড়িতে চলে যেতে পারতেন। এখনকার মতো জনসমাজে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সে ক্ষেত্রে অনেকটাই কমানো যেত।

ব্যাপক মাত্রার টেস্টের মাধ্যমে করোনা সংক্রমিতদের চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নেওয়া যদি আমাদের জন্য কঠিন হয়, সে ক্ষেত্রে বিকল্প পথ হচ্ছে কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা। এ সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলে কীভাবে তা সামাল দেওয়া যায়, একই সঙ্গে সেই কৌশল নির্ধারণ করাও আমাদের জন্য জরুরি। ঢিলেঢালা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নীতি নিয়ে যদি পর্যায়ক্রমে সাধারণ ছুটির নামে তা বাড়াতে হয়, তবে তাতে আমাদের সামগ্রিক ক্ষতি বেশি হতে পারে। সংক্রমণ এমন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা সামাল দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

আমরা আশা করি, সরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পথ গ্রহণ করবে। সঠিক কৌশল গ্রহণে বিলম্ব হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকবে।