সংকট উত্তরণে কোরআন-হাদিসে নির্দেশিত দোয়া

বিপদদাতা ও ত্রাতা আল্লাহ তাআলা; তাই তাঁরই আশ্রয় নিতে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য চাই।’ (১: ৪)। ‘তোমরা বিপদে–সংকটে দ্রুতগতিতে দৌড়ে আল্লাহর আশ্রয়ে পালিয়ে আসো।’ (৫১: ৫০)। হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে ঘোর সংকটে ফরিয়াদ করলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-জলিমিন।’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই, নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্গত হয়ে পড়েছি।’ ‘আমি (আল্লাহ) তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে ঘোর বিপদ থেকে উদ্ধার করলাম, এভাবেই আমি বিশ্বাসীদের মুক্তি দেই।’ (২১: ৮৭-৮৮)। যা বিখ্যাত দোয়া ইউনুস নামে বিশ্বব্যাপী আজও পঠিত হয় সংকটকালে।

হজরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘকাল কঠিন দুরারোগ্য সংক্রামক কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ দোয়া করলেন: ‘রব্বি আন্নি মাছ্ছানিয়াদ-দুর্রু ওয়া আন্তা আরহামুর রাহিমিন।’ অর্থাৎ ‘হে আমার প্রভু! আমি সংকটাপন্ন, আর আপনি সকল দয়াবানের শ্রেষ্ঠ দয়াল।’ ‘আমি (আল্লাহ) তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার সংকট মোচন করলাম এবং তাকে তার পরিবার ফিরিয়ে দিলাম দ্বিগুণ নিয়ামতসহ।’ (২১: ৮৩-৮৪)।

হজরত নূহ (আ.) হতাশার দ্বারপ্রান্তে এসে আবেদন করলেন, ‘রব্বি আন্নি মাগলুবুন ফান্তাছির।’ অর্থাৎ ‘হে আমার প্রভু! আমি পরাজিত, আপনি আমাকে উদ্ধার করুন।’ (৫৪: ১০)।

সাহাবারা দুর্যোগ আসন্ন দেখে বলেছিলেন: ‘হাছবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল।’ অর্থাৎ ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম অভিভাবক।’ (৩: ১৭৩)। আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন: ‘নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাছির।’ অর্থাৎ ‘(তিনি আল্লাহ) সর্বোত্তম অভিভাবক ও সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’ (৮: ৪০)। রোগ–শোক—সব ক্ষেত্রে সুরা ফাতিহা অনন্য দোয়া। তাই সুরা ফাতিহার এক নাম ‘সুরাতুদ দোয়া’ বা দোয়ার সুরা। (বুখারি)।

প্রিয় নবীজি (সা.) দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারি থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতেন: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন ছায়্যিয়িল আছকাম।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই ধবল রোগ, মনোবৈকল্য, কুষ্ঠ ও মন্দ কঠিন রোগসমূহ হতে।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৪, নাসায়ি: ৫৪৯৩-৫৫০৮)। ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুল না বি গদবিকা ওয়া লা তুহলিক না বি আযাবিকা ওয়া আফি না কবলা যালিক।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার গজব দ্বারা আমাদের নিঃশেষ কোরো না, তোমার আজাব দ্বারা আমাদের ধ্বংস কোরো না, তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিযি: ৩৪৫০)। সব ধরনের
রোগ–শোক থেকে বাঁচার দোয়া, ‘আল্লাহুম্মাহ ফাজনা মিন কুল্লি বালায়িদ্দুনিয়া ওয়া আজাবিল আখিরা, তাওয়াফফা না মুসলিমাও ওয়া আলহি না বিছ্ছালিহীন।’ (আমিন)! অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের দুনিয়ার সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন, অনুগত মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং সালিহিন সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (আপনি কবুল করুন)!

কোরআন কারিমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া: ‘রব্বানা লা তুআখিয না, ইন নাসি না আও আখ্ত না। রব্বা না ওয়া লা তুহাম্মিল না, মা লা তকাতা লানা বিহ, ওয়াফু আন্না ওয়াগ্ফির লানা ওয়ার্হাম না, আন্তা মাওলা না, ফানছুর না, আলাল কওমিল কাফিরিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন গুরুভার অর্পণ করেছিলেন, আমাদের ওপর তেমন দায়িত্বভার চাপাবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের ওপর অর্পণ করবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং অকৃতজ্ঞদের ওপর আমাদের বিজয়ী করুন।’ (২: ২৮৬)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com