জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরা

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার লুঙ্গাতুঙ্গা জলমহালের পানি শুকিয়ে মাছ শিকারের খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে এই বেআইনি কাজটি হচ্ছে, তা আমাদের কাছে এক বড় প্রশ্ন।

সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের পেছনে অবস্থিত লুঙ্গাতুঙ্গা জলমহালে ১০টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি শুকিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে মাছ শিকার করা হচ্ছে। খোদ জলমহালটির ইজারাদারেরাই এভাবে মাছ শিকার করছেন। এতে একদিকে যেমন মিঠাপানির মাছ ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে কৃষক ফসলি জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না। পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশের মিঠাপানির মাছের অন্যতম পীঠস্থান সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা। এ জেলাজুড়ে ছোট-বড় দুই শতাধিক হাওর রয়েছে, যা মিঠাপানির মাছ উৎপাদনের জন্য পরিচিত। এসব হাওরের মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে একসময় দেশের অন্যান্য জেলায়ও যেত; রপ্তানি হতো বিদেশেও। কিন্তু এখন সেই সুদিন আর নেই। এখন স্থানীয় হাট-বাজারেই মাছের আকাল দেখা যায়। ইতিমধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ জন্য জলমহালের ইজারাদারেরা যে বহুলাংশে দায়ী, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

হাওরের ইজারা প্রকৃত জেলেদের কাছে দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে প্রকৃত মৎস্যজীবী নয় বা অ-মৎস্যজীবীরাই ইজারা নিচ্ছেন বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের সমিতি ইজারা পেলেও তাদের নাম করে স্থানীয় প্রভাবশালীরাই ভোগ করছেন ওই সব হাওর। আবার কখনো মৎস্যজীবী সমিতি নামে যেসব সংগঠন দেখানো হচ্ছে, সেখানে আদৌ কোনো মৎস্যজীবী নেই। তারাই অর্থের লোভে হাওরের পানি শুকিয়ে মাছ ধরছেন। কেউ বাধা দিলে উল্টো মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করাটা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

অথচ ইজারার নীতিমালায় জলমহালের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার নিয়ম তো নেই-ই; বরং জলমহাল খনন এবং এর পারে বৃক্ষ রোপণ করার শর্ত আছে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যে অনেকখানি উদাসীন, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। এখন এসব ইজারাদারের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। তাদের কড়া শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। জলমহাল ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা তা পায়। তা না হলে এসব জলমহাল মাছশূন্য হতে আর বেশি সময় নেবে না।