প্রণোদনা প্যাকেজ কতটা জনবান্ধব?

করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রভাব স্বল্প মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে দুইভাবে অনুভূত হবে। স্বল্প মেয়াদে আমরা দুটি বিষয় একসঙ্গে দেখতে পাচ্ছি, একদিকে পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাত স্থবির হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে অনেক মানুষ আয়ের উৎস হারিয়ে ফেলায় দ্রুত ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। শ্রমিক, মজুর ও বেতনভুক্ত কর্মচারী কাজ না করলে যেমন পণ্য ও সেবা দিতে পারছেন না এবং উৎপাদকেরা দিশেহারা বোধ করছেন, তেমনি আবার আয় করতে না পারায় এই শ্রমিক, মজুর, বেতনভুক্ত অস্থায়ী কর্মচারীরা কেউ চাকরি হারিয়ে, কেউবা চাকরি হারানোর ভয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

ঋণসহায়তা কতটা কাজে দেবে?
অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে, অর্থাৎ করোনা–পরবর্তী মন্দার সময় উৎপাদন পুনরায় শুরু হবে, তবে বর্তমান ক্ষতির কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে, উৎপাদন কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে এবং দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এ রকম অবস্থায় যখন মন্ত্রীরা বলছেন যে এই আর্থিক প্রণোদনা, যা মূলত ঋণের সুবিধা, তা সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে পৌঁছাবে, তখন তাঁরা হয়তো আশা করছেন বৃহৎ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই বিপৎকালীন ঋণ নিয়ে উৎপাদনব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন দিলে এটা সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। আর আমদানি–রপ্তানি সহজ হলে এর সুফলও সবাই সমানভাবে ভোগ করবেন বা ধরেন, সরকার আশাবাদী যে সেই ঋণের টাকাটা ব্যবসায়ীরা এখন না পেলেও ভবিষ্যতে পাবেন, যা বিপৎকালীন ক্ষতি–পরবর্তী সময়ে কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। অর্থনীতিকে সচল রাখতে অর্থ সঞ্চালনের সম্প্রসারণবাদী এমন নীতি অনেক দেশই ব্যবহার করে, তবে এর মূল উদ্দেশ্য হয় সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে মন্দা মোকাবিলা। অর্থাৎ ঋণপ্রাপ্তির সুবিধা ব্যবসায়ীদের একধরনের নিশ্চয়তা দেয় যে তাঁরা এখন যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তা তাঁদের সুরক্ষা দেবে ঋণের সুবিধা বাড়লে। এভাবে চিন্তা করলে সরকার তো আশাবাদী হবেই এই প্যাকেজ নিয়ে। তাহলে সমস্যা কোথায়?

প্রথম সমস্যা হলো, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ দিনমজুর ও শ্রমিক, অস্থায়ী কর্মীরা, যাঁরা এখনো চাকরি হারাননি, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনানুষ্ঠানিক খাতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সংখ্যা তো পাঁচ কোটির ওপরে। এই খাতে যাঁরা এরই মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদেরই–বা কী হবে? দ্বিতীয় সমস্যা হলো, সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসায়ীদের ওপর সরকার ছেড়ে দিয়েছেন কোটি কোটি মানুষের আয়ের নিশ্চয়তা। এখন প্রশ্ন হলো, সব ব্যবসায়ীই কি ঋণ পাবেন? তাঁরা তো ঋণ না–ও পেতে পারেন, ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ না–ও করতে পারেন। তাহলে কি সেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেতন দেবে না? তাহলে এই ঋণ কীভাবে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে পৌঁছাবে বলে সরকার দাবি করতে পারে?

কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা ফিরবে কি?
এই প্যাকেজে যা নেই, তা হলো এই দুর্দিনে জরুরি ভিত্তিতে মৌলিক চাহিদা পূরণে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে অর্থ সঞ্চালন। চাকরি হারিয়ে, কাজ না থাকায়, মজুরি না পাওয়ায় যাঁরা মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেই শ্রেণির কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া, নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়া জরুরি হলেও সরকার এই পথ বেছে নেয়নি। কারণ, সরকার এটাকে জরুরি মনে করছে না। ক্ষুধার্ত মানুষ রাস্তায় নেমে এলে, ছিনতাই, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধ বেড়ে গেলে হয়তো সরকার এটা জরুরি মনে করতে পারে। কিন্তু তখন আর এসব সামাজিক ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে না। এখন যেভাবে প্রণোদনা দেওয়া হলো, তাতে বেতনদাতা ও বেতনভুক্তর মধ্যে একটি স্থায়ী দ্বন্দ্ব উসকে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হলো। যেই ভুক্তভোগীরা সরাসরি সরকারের কাছ থেকে নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা পেয়ে এই আপৎকাল পার করতে পারতেন, তাঁদের সরাসরি বৃহৎ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেনে থেকে প্রতিনিয়ত দুই পক্ষের ‘টাকা নাই’ ‘টাকা নাই’ অস্থিরতা ও সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হলো। এর প্রথম প্রকাশ আমরা দেখলাম ৪ এপ্রিল থেকে করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে শহরমুখী শ্রমিকদের ঢল দেখে।

চাকরি হারানোর ভয়ে করোনাঝুঁকি উপেক্ষা করে লাখ লাখ শ্রমিকের বেপরোয়া যাত্রা প্রমাণ করে, মহামারির সময়ে সামাজিক সুরক্ষা দিতে ব্যবসায়ীবান্ধব প্যাকেজ আসলে কত বেশি অকার্যকর। কী হতো যদি এখনই সরাসরি নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত? এই শ্রমিকেরা যদি নিজ নিজ এলাকায় থেকে নিশ্চিতভাবে জানতেন যে তাঁরা সাহায্য পাবেন, তাঁদের এভাবে বেপরোয়া হয়ে হেঁটে আসতে হতো না। শ্রমিকদের বেতন নিয়ে শুরু হয়েছে অসন্তোষ। আজও দুজন শ্রমিক বেতনের দাবিতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে।

খাদ্য ও অর্থসহায়তাই অর্থনীতির জন্য উপকারী
খাদ্য ও অর্থ প্রদান শুধু বর্তমানে করোনাদুর্গত ব্যক্তিদের সুরক্ষাই দেবে না, এর অর্থনৈতিক সুফলও রয়েছে, তা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে পুরো অর্থনীতি উপকৃত হতে পারে। অর্থনীতির পুরোধা মানুষের একজন জন মেনার্ড কেইনসের মতে, মন্দার সময় ব্যয় সম্প্রসারণমূলক নীতি গ্রহণ করে মন্দা থেকে উত্তরণ সম্ভব। এর মধ্য দিয়ে দ্রব্যের কমে যাওয়া চাহিদা বাড়ানো সম্ভব। দুইভাবে মন্দাবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব—ব্যয় সম্প্রসারণ ও মুদ্রা সম্প্রসারণ। নগদ অর্থ প্রদান ও খাদ্যসহায়তা হচ্ছে ব্যয় সম্প্রসারণ নীতি। এর মাধ্যমে সরকার কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয় বাড়িয়ে তা মানুষের কাছে এমনভাবে পৌঁছে দেয়, যেন তা সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে অথবা কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রেখে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এই বর্ধিত ক্রয়ক্ষমতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদার পতন ঘটে না।

অনেক ধরনের ব্যয় সম্প্রসারণের পাশাপাশি এটা হতে পারে মহামারির সময় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানো, খাদ্যসংকটে জরুরি সাহায্য প্রদান, কিংবা জনসুরক্ষা দেয় এমন খাতে ট্যাক্স কমানো ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ায় বিক্রেতার আয় যেমন অব্যাহত থাকে, তেমন এ ধরনের ব্যয় সম্প্রসারণ বাজার স্থিতিশীল করতেও ভূমিকা রাখে। এভাবে আপদকালীন অর্থ সঞ্চালন অব্যাহত থাকলে আসন্ন মন্দাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

আরেকটি পদ্ধতি হলো সুদ কমিয়ে ঋণসহায়তা বাড়িয়ে মুদ্রা সম্প্রসারণ। এর মাধ্যমে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশের সরকার এই দ্বিতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এই পদ্ধতি তাৎক্ষণিক সংকটকে মোকাবিলা করতে পারে না, বরং একধরনের প্রত্যাশা তৈরি করতে ভূমিকা পালন করে। এই প্রত্যাশা প্রতিটি সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার মধ্যে সমানভাবে তৈরি হয় না। যারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী, তারা এই ঋণ প্রাপ্যতাকে ইতিবাচকভাবে নেয় এবং বাকিরা এই নীতিতে সাধারণত আস্থাশীল থাকে না। এতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের মধ্যে সরকারের প্রতি অনাস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

ব্যয় সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করলে কোষাগারে অর্থ না থাকলে সরকারকে ঋণ নিতে হয়। এই ঋণ সরকার পরিশোধ করে জনগণের দেওয়া ট্যাক্স ও ভ্যাট থেকে। কিন্তু মুদ্রা সম্প্রসারণ নীতি (সুদে ভর্তুকি) গ্রহণ করলে সরকার সুদের একটা অংশের জন্য ব্যয় করলেও উৎপাদক বা বিনিয়োগকারীর ওপর ঋণ পরিশোধের দায় থাকে। আমরা জানি ২০১৯–এর নভেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি—১১ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনাভাইরাস দুর্যোগ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, ঋণ পরিশোধের অপারগতায় আগামী জুন মাস পর্যন্ত নতুন করে কোনো ঋণকে খেলাপি ঘোষণা করা যাবে না (১৯ মার্চ ২০২০, প্রথম আলো)। সরকার ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে কঠোর না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় নতুন করে ঋণ নিলে তা পরিশোধ করা না গেলে জিডিপিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। এই অবস্থা অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে মোটেও সুখকর না হলেও মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ঋণ সম্প্রসারণ নীতির দিকেই বেশি জোর দিয়েছে। কিন্তু এই নীতি অবলম্বন করে সরকার যদি পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সময় দুস্থ অসহায় মানুষদের জন্য অর্থসহায়তা নিয়ে এগিয়ে না আসে, তাহলে এই ব্যবসাবান্ধব নীতি থেকে ব্যবসায়ীরাই অসমভাবে উপকৃত হবেন।

সামাজিক সুরক্ষা তহবিল
ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে দেওয়া সাহায্য দিয়ে বেশি দিন পার করা সম্ভব নয়। সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের কাজটি সরকারের। এটাকে রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজ হিসেবে দেখলে মনে হতে পারে এটি কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য। অথচ এই দুঃসময়ে খাদ্য সরবরাহ পাওয়া জনগণের অধিকার। এই সাহায্য মোটেই অর্থনীতির বাইরের কোনো সাময়িক দান প্রকল্প নয়।

এ মুহূর্তে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা তহবিল। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে সহায়তা দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তার সঠিক পরিমাণ এবং কাদের কীভাবে দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলও গঠন করা হয়েছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব তালিকা তৈরি করা হয়, সেগুলো কতখানি প্রকৃত অভাবী, অনাহারী ও সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, প্রথমত নতুন করে যাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁরা আগে থেকে হয়তো তালিকাভুক্ত ছিলেন না। দ্বিতীয়ত দলীয় সম্পৃক্ততাকে মাপকাঠি ধরে তালিকাভুক্ত করা হলে তা সত্যিকার প্রয়োজন না মিটিয়ে দলীয় উদ্দেশ্য হাসিলেই বেশি সহায়ক হয়। এ ক্ষেত্রে সাহায্য যাঁরা পাবেন, তাঁদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যায়। নিজের এলাকার নামে ক্লিক করলে সবাই যেন দেখতে পারে, কার নাম আছে আর কার নেই। সে ক্ষেত্রে যদি কোনো ধনী পরিবার সেই তালিকায় থাকেন বা কোনো দরিদ্র পরিবার বাদ পড়েন, তা যেন তাঁরা অভিযোগ আকারে প্রকাশ করতে পারেন। এভাবে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এখানে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

কয়েক দিন ধরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, প্রণোদনা পেতে হলে শ্রমিকদের পরিচয়পত্রসহ অ্যাকাউন্টে বেতন জমা দেওয়ার প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু সবার পরিচয়পত্র ও অ্যাকাউন্ট না থাকায় এই বেতনপ্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, তা প্রশ্ন রয়ে গেছে। অর্থাৎ এখন শুধু প্রণোদনা প্যাকেজ দিলেই নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না, সরকারের সহায়তা আসলে জায়গামতো পৌঁছাচ্ছে কি না, বরং সুষ্ঠু বিতরণপ্রক্রিয়া এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যায়। যেসব শ্রমিকের নাম থাকবে কিন্তু টাকা পাবেন না, তাঁরা যেন এসে দাবি করতে পারেন টাকা না পাওয়ার। এভাবে গণনজরদারির মেকানিজম তৈরি করে জবাবদিহি বাড়ানো যায়।

সরকার ঘোষিত ৭২ হাজার ৭৫০ কোটির প্রণোদনা প্যাকেজটি করোনাভাইরাস দুর্যোগ মোকাবিলায় সময়োপযোগী নয়, জনবান্ধবও নয়। অনেকে জিডিপিতে এর শতকরা ভাগ (২.৫২%) দেখে এটাকে খুব বড় কিছু হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। কিন্তু দেখা উচিত ছিল সারা পৃথিবীতে সামাজিক সুরক্ষায় সরকার কীভাবে অবদান রাখছে। অর্থাৎ সংখ্যার বাইরে গিয়ে প্রণোদনার কার্যকারিতা বিশ্লেষণের প্রয়োজন ছিল। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় জনগণের দুর্ভোগ কমানোয় প্রণোদনার কার্যকারিতাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরলে নিশ্চয়ই এখানে সামাজিক সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট প্যাকেজটি প্রথম ঘোষিত প্যাকেজ হিসেবেই পাওয়া যেত। তা হয়নি বলে এই প্যাকেজকে সময়োপযোগী ও জনবান্ধব বলা যাচ্ছে না।

মোশাহিদা সুলতানা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক