মহামারির সূচনা পর্বে বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তাকে সর্বশেষ স্তরের শুরু হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশে কোভিড–১৯ সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর্যায়ে রয়েছে। সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য খুবই সংকটময়। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন রয়েছে। এই আইনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণের গতি–প্রকৃতি বিবেচনায় নিলেও এটা ধরে নেওয়া যায় যে বাংলাদেশ এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ফলে দুর্যোগ মোকাবিলার সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো নানা কৌশল নিয়েছে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কিছু দেশীয় বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রথমত, আমাদের আর্থিক ও চিকিৎসা অবকাঠামোগত সামর্থ্য সীমিত। দ্বিতীয়ত, এটা একটি জনবহুল দেশ এবং তৃতীয়ত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সময়ে বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষের প্রতিদিনের খাওয়া–দাওয়া নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটি খুবই কঠিন। 

এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার একমাত্র পথ হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের যে সামর্থ্য রয়েছে, তার পূর্ণ ব্যবহার। বর্তমান পরিস্থিতিতে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এই আইনে যে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের কথা বলা হয়েছে তাকে সক্রিয় করা এবং কাউন্সিলের এ–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা জনগণকে জানানো। এই জাতীয় কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, সব বাহিনীর প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ অনেকের থাকার কথা। 

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন যে স্তরে এসে পৌঁছেছে তাতে এটা এখন আর শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। একে সামগ্রিক জাতীয় সংকট ও দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলাসংক্রান্ত একটি জাতীয় নীতিমালা ও পরিকল্পনার কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় এই উদ্যোগের সঙ্গে দেশের সংশ্লিষ্ট সব বেসরকারি খাতকে যুক্ত করতে হবে। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে যেহেতু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও প্রতিদিনের খাবারের নিশ্চয়তার সম্পর্ক রয়েছে, তাই আমরা একটি সামগ্রিক দুর্যোগ পরিকল্পনার ওপর জোর দিতে চাই। এই বাস্তবতার দিকে নজর না দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্যোগ কার্যকর করা কঠিন। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে ত্রাণ কার্যক্রমসহ নগদ অর্থসহায়তার বিষয়ে নানা মতামত দিয়েছেন। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি কার্যকর পথ বের করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। 

আমরা যেহেতু এখন সংক্রমণের একটি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি, তাই আশঙ্কা করা যায় যে সামনের দিনগুলোতে দেশের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থার ওপর বড় চাপ পড়বে। সেই প্রস্তুতি জোরালোভাবে নিতে হবে। শুধু সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। বিশ্বের সব দেশেই সরকারি–বেসরকারি খাত মিলিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বেসরকারি খাতে সব চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান, ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান, আইসিডিডিআরবির মতো চিকিৎসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল কোরসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত যত ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ শুরু করতে হবে। এবং সেটি করতে হবে এখনই।