টিকাদান যখন স্থগিত

করোনাভাইরাস আক্রমণের আগে বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকার শিশুদের মধ্যে হামের ভাইরাসের সংক্রমণ এবং বেশ কিছু শিশুমৃত্যু দেখা গিয়েছিল। লকডাউনের কারণে বরিশাল বিভাগে হামসহ শিশু ও নবজাতকদের জরুরি কয়েকটি টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগেও টিকাদান কার্যত বন্ধ। এর মধ্যে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে শিশুরা হামে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল মেয়াদে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এই কর্মসূচির ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে হামের টিকা দেওয়ার কথা ছিল। শুধু যে এই কর্মসূচিই বাতিল হয়েছে, তা নয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিও (ইপিআই) হোঁচট খেয়েছে কোভিড-১৯–এর কারণে। এর মধ্যে রয়েছে নবজাতকের যক্ষ্মারোধী বিসিজি টিকাসহ দুই বছর বয়সের মধ্যে দেওয়ার জরুরি টিকাগুলো। রয়েছে মুখে খাবার পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস বি, এক ধরনের নিউমোনিয়া, হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক। এই টিকার আওতাভুক্ত শিশু ৩৭ লাখ।

টানা অগ্রগতির পর বছর তিনেক ধরে হাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছিল। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বড় পরিসরে হাম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। ওই সময় হামের সংখ্যা কমেছিল। ২০১৭ সাল থেকে আবারও এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ বছর দেশের অন্তত ৪৫টি জায়গায় হামের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। কোনো এলাকায় অন্তত তিনজন আক্রান্ত হলে তাকে প্রাদুর্ভাব বলা হয়। ওই ৪৫টি এলাকার মধ্যে ছয়টি প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)।

একেই বলে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। ২০১৭ সালের পর থেকে শিশুদের টিকা দেওয়ায় যে ঢিলেমি আসে, তারই ফল হামের প্রাদুর্ভাব। করোনার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে সময়ের টিকা সময়ে দেওয়া না গেলে যেমন শিশুস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে, তেমনি টিকার মেয়াদও শেষ হয়। আবার করোনার ঝুঁকির মধ্যে শিশুদের সুনিশ্চিত নিরাপত্তায় টিকা দেওয়াও কঠিন।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চাঙা করা জরুরি। কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের কীভাবে টিকা দেওয়ার কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবতে হবে। কীভাবে ও কখন টিকা দেওয়া যাবে, না দেওয়া গেলে শিশুদের অভিভাবকদের কী করতে হবে, সেসব গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া দরকার। সবকিছুর আগে প্রয়োজন করণীয় ও কৌশল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কর্মকৌশল প্রণয়ন করা।