ব্যবসায়ীদের সুবিবেচনা

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আজ ১০ মে থেকে দোকানপাট খুলতে আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরের ব্যবসায়ীদের কিছু অংশ এখনো দোকানপাট, বিপণিবিতান ইত্যাদি না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, মোতালিব প্লাজা, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১১ নম্বর সেকশন পর্যন্ত, গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া এলাকার অনেক ছোট–বড় শপিং মল ও মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতিগুলো তাদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। আমরা মনে করি, সিদ্ধান্তটি ব্যবসায়ীদের সুবিবেচনাপ্রসূত। কারণ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকা অবস্থায় শপিং মল ও মার্কেটগুলো খোলা হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে—এটা তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অর্থনীতির আরও ক্ষতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক ক্ষতির চেয়ে মানুষের জীবনের ঝুঁকি এড়ানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দৃষ্টিভঙ্গি সেই মার্কেট ও দোকানমালিকদেরও থাকা প্রয়োজন, যাঁরা আজ থেকে কেনাবেচা শুরু করছেন। জীবন রক্ষা ও অর্থনীতির ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় রাখা—এই উভয় কূল রক্ষার চ্যালেঞ্জে সবাইকে বিচক্ষণতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দোকানপাট খোলার ওপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অর্থ কোনোভাবেই এটা নয় যে ভাইরাস সংক্রমণের বিপদ কেটে গেছে। বরং উল্টো তা আরও বেড়েছে। এখন দোকানপাটে মানুষের ভিড় হলে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা না হলে যাঁরা এত দিন ঘরে বসে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। সুতরাং আমরা দোকানপাট বন্ধ থাকার দিনগুলো পেরিয়ে এখন এক নতুন ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছি। এই ঝুঁকি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় শ্রেণির মানুষকেই উপলব্ধি করতে হবে এবং নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে।

সেটা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে, যদি সবাই সতর্কতা ও সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলেন। সরকারি কর্তৃপক্ষ কিছু শর্ত আরোপ করেছে। যেমন ক্রেতারা নিজ নিজ এলাকার মধ্যে অবস্থিত মার্কেটগুলোতেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারবেন; এ জন্য অন্যান্য এলাকায় যাবেন না। এতে মার্কেটগুলোতে ভিড় কম হবে, ক্রেতাদের পক্ষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা সারা সম্ভব হবে।

শপিং মল, মার্কেট ইত্যাদির প্রবেশমুখে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল বা চেম্বার স্থাপন করা এবং মানুষের দেহের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানার বসানোর যে নির্দেশনা ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই পালন করা প্রয়োজন। এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আগে যেন কোনো শপিং মল বা মার্কেট খোলা না হয়, মহানগর পুলিশকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কিছু মার্কেটের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, এসব বসানোর শর্তের কথা তাঁদের জানানো হয়েছে মাত্র দুই দিন আগে। এত অল্প সময়ে কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে তাঁদের হাতে আর সময় নেই। তাঁরা সময় নিয়ে এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো স্থাপনের পরেই দোকানপাট খুলতে পারেন। মহানগর পুলিশকে লক্ষ রাখতে হবে খোলা মার্কেট ও দোকানপাটগুলোতে তাদের নির্দেশনার বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না।