নারীর প্রতি সহিংসতা

সেদিন প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত দেশের নারীবৈষম্যের করুণ চিত্রবিষয়ক প্রতিবেদনটি পড়ে অত্যন্ত আতঙ্কিত হলাম। ভাবতে অবাক লাগছে, এ রকম আধুনিক যুগেও বাংলাদেশের নারীদের জীবনে ঘটছে ভয়াবহ সহিংসতা।
নারী ও পুরুষের মধ্যকার অসমতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এখনো বিরাজমান। আরও বেশি দুঃখজনক ঘটনা হলো, বাংলাদেশে এমন অনেক সহিংসতা আছে, যা রাষ্ট্রই ঘটায় বা রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেয় না। গ্রাম্য সালিসের নামেও নারীকে নির্যাতন করা হয়। ফতোয়া দেওয়া হয়।
এসব সহিংসতার মধ্যে অ্যাসিড নিক্ষেপের পাশাপাশি রয়েছে ধর্ষণ, এরপর হত্যা। বিবাহিত নারীরাও স্বামী বা পরিবারের হাতে খুন হন। ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় কিশোরী নির্যাতনের শীর্ষে বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বরে।
কিশোরী নির্যাতনের সবচেয়ে বড় ঘটনাই হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণের ভয়ে গ্রামাঞ্চলে অপ্রাপ্ত বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ। সেদিন প্রকাশিত আরেকটি খবর ‘প্রতিবেশীকে’ ফাঁসাতে নিজ মেয়েকে মেরে ফেললেন বাবা, এটি পড়ে আমি কী লিখব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঝুমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা টিপে হত্যা করে তার বাবা। হত্যার পর তাকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে প্রতিবেশীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এর চেয়ে জঘন্য কোনো ঘটনা হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক আইন প্রণয়ন করলেও এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। তাই শুধু আইন প্রণয়ন নয়, এর যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন, প্রয়োজন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সামাজিক সচেতনতার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো এই সহিংসতা চলতেই থাকবে।
পারমিতা সরকার, ঢাকা।