দুশ্চিন্তায় আমচাষিরা

বাংলাদেশে যত আমের চাষ হয়, তার সিংহভাগই হয়ে থাকে রাজশাহী অঞ্চলে। এলাকার অনেক চাষির কাছে ধান নয়, আমই প্রধান ফসল। চাষিরা বাগানে উৎপাদিত আম বিক্রি করে কেবল সারা বছর সংসারের চাহিদাই মেটান না, পরের বছর আম চাষের পুঁজিও তাঁদের সঞ্চয় করে রাখতে হয়। রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহীতে এবার ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। গাছে ফলনও ভালো হয়েছে। বড় ধরনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় বাগানের আমও অক্ষত আছে। কিন্তু চাষিদের দুশ্চিন্তা হলো করোনা সংকটের কারণে তাঁরা আম বিক্রি করতে পারবেন কি না। বিক্রি হলেও খরচ উঠে আসবে কি না।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, প্রতিবছর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আমবাগানের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করতেন। অনেকে চাষের জন্য দাদন বা বিনা সুদে আগাম অর্থও দিতেন। কিন্তু এবার লকডাউন থাকায় বাইরের কোনো ব্যবসায়ী চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যঁারা যোগাযোগ করেছেন, তাঁরা গত বছরের চেয়ে অনেক কম দাম বলছেন। গত বছর যে বাগানের আম তিন লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তাঁরা দাম বলেছেন ৫০-৬০ হাজার টাকা।

ইতিবাচক দিক হলো আম বিক্রি ও পরিবহন নিয়ে প্রশাসন আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং তারা আমের বাজারজাত করতে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আম পাকতে জুন মাস নাগাদ লেগে যাবে এবং তখন লকডাউন উঠে যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আম বিদেশেও রপ্তানি হয়। এবার বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। মৌসুম থাকতে বিমান যোগাযোগ চালু হলে এ বছরও রপ্তানি করা যাবে। আর যদি তা একেবারেই সম্ভব না হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনুযায়ী যাতে আম সরবরাহ করা যায়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

আম পচনশীল পণ্য বিধায় গাছ থেকে পাড়ার তিন-চার দিনের মধ্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে হয়। অতএব, ব্যবসায়ীরা যাতে রাজশাহী অঞ্চল থেকে দ্রুত গন্তব্যস্থলে আম নিতে পারেন, সে জন্য পরিবহনব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করা জরুরি। বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহনে বাধা নেই। তবে আমচাষি ও ব্যবসায়ী উভয়কেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা ও পরিবহনের কাজটি করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা থাকতে হবে।