কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সোমবারের ব্রিফিংয়ে আক্রান্তের যে সংখ্যা বলা হয়েছিল, সে তুলনায় মঙ্গলবার সংক্রমণের সংখ্যা কিছু কম ছিল। কিন্তু সেটা যে কোনো স্বস্তির সংকেত ছিল না, তা বোঝা গেল গতকাল বুধবারের ব্রিফিংয়ে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৬২ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে গতকাল। এ সময় মারা গেছেন ১৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও সর্বোচ্চ মৃত্যু। বোঝা যাচ্ছে, সংক্রমণের ধারা কমের দিকে নয়, বরং বাড়তির দিকে। 

সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবারের পরিসংখ্যানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার রহস্যটা হলো, এই সময়ে আগের ২৪ ঘণ্টার চেয়ে শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়েছে কম। আগের ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছিল ৭ হাজার ২০৮টি নমুনা, আর পরের ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৬ হাজার ৭৭৩টি নমুনা। অর্থাৎ পরীক্ষার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ কমে যাওয়াই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার রহস্য। পরের ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ৯০০টি এবং শনাক্তের সংখ্যাও ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।

ফলে দেশে প্রকৃত সংক্রমণের পরিস্থিতি জানতে অধিক পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই রক্ষণশীল অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এবং এর কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও মিলছে না। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যেদিন এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হলো, ঠিক তার পরদিনই শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ কমিয়ে দেওয়ার কারণ কী—এই জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এই জিজ্ঞাসার উত্তর মেলে না। কারণ, কোভিড-১৯ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ নিজের মর্জিমাফিক যেটুকু তথ্য প্রকাশ করে, সংবাদমাধ্যম শুধু সেটুকুই জনসাধারণকে জানাতে পারে। সাংবাদিকদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির প্রকৃত অবস্থা বিশেষজ্ঞরাও নিরূপণ করতে পারছেন না। কারণ, সংক্রমণ শনাক্তকরণের পরীক্ষার হার এখনো খুবই কম। বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮২২। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে, যদি শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরীক্ষার হারের দিক থেকে আমরা প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। পাকিস্তানে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে পরীক্ষার বর্তমান হার ১ দশমিক ২৮ আর ভারতে ১ দশমিক ১৭। কিন্তু আমাদের দেশে এই হার মাত্র শূন্য দশমিক ৭১। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পরীক্ষার হার আরও অনেক বেশি। দৃষ্টান্তস্বরূপ ইতালিতে ৪১, স্পেনে ৩৪, যুক্তরাজ্যে ১৮ দশমিক ৭১, কানাডায় ২৮ দশমিক ৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২৬। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে শনাক্তকরণ পরীক্ষার ওপর। এটা সাধারণ জ্ঞানেই বোধগম্য যে সংক্রমণের প্রবণতা জানার এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাথমিক পন্থাই হচ্ছে পরীক্ষা করা। কিন্তু আমাদের দেশে গোড়া থেকেই বিষয়টির প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশে এখন মোট ৩৫টি ল্যাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু তার পরেও আমাদের পরীক্ষার হার এত কম কেন? পরীক্ষার মান নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ যেহেতু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, সেহেতু অবিলম্বে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দৈনিক অন্তত ১০ হাজারে উন্নীত করতে হবে। নইলে অচিরেই মহামারি পরিস্থিতির আরও অবনতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।