নারী ও শিশুদের চিকিৎসা

চাঁদপুরের মতলবে অবস্থিত আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র) হাসপাতালটি বিশেষায়িত। এখানে সাধারণত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুতে বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয় এবং এই বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে বহু রোগী আসে চিকিৎসাসেবা নিতে। কিন্তু করোনা সংকটের কারণে গত দুই মাসে ডায়রিয়া ও কলেরা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে অনেক কম। 

এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলেরা ও ডায়রিয়ার বাইরে নারী ও শিশুদের সব রোগের চিকিৎসাসেবা দেবে তারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নারী ও শিশুরা দূরের হাসপাতালে যেতে পারে না। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকায় ৯ দিনে (১ মে থেকে ৯ মে) প্রসবকালীন, প্রসবপূর্ব, প্রসব–পরবর্তী চিকিৎসা নিয়েছেন ২৭৮ জন নারী। এ ছাড়া সর্দি, জ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়েছে ২৪টি শিশু। চিকিৎসা নেওয়া এসব মা ও শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। হাসপাতালে ৭০টি শয্যা আছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে ১৪০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়। 

প্রথম আলোর মতলব দক্ষিণ প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখেছেন, হাসপাতালের প্রায় সব শয্যাতেই রোগী আছে। এর আগে গণমাধ্যমে এ রকম খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে হাসপাতালটি রোগীশূন্য। করোনা রোগীর চিকিৎসা না হলেও প্রত্যেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জানিয়েছেন, করোনা–ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসক ও নার্সরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী ভূমিকার কারণে এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের ভরসার স্থল হয়েছে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। এ উদ্যোগ যেমন সময়ের দাবি, তেমনি প্রেরণাসঞ্চারী। তাঁরা এমন সময়ে নিজেদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নারী ও শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, যখন শহরের বড় বড় হাসপাতাল করোনার অজুহাত দেখিয়ে অনেক রোগীকে ফেরত দিচ্ছে। কোনো অবস্থায়ই একটি হাসপাতাল বা একজন চিকিৎসক রোগীকে ফেরত দিতে পারেন না। যুদ্ধের সময়ে যদি চিকিৎসক জানতে পারেন যে চিকিৎসাপ্রার্থী শত্রুপক্ষের কেউ, তারপরও তার সেবা দেওয়া একজন চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। 

মতলবের আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নারী ও শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা আশা করব, অন্যান্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অন্যান্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে।