বাজেট দিয়ে কী হবে?

করোনাকালে উন্নয়ন বলুন আর অর্থনীতির চাকাকে সচল করা বলুন, অনেক অনেক টাকা লাগবে, সুসংহত পরিকল্পনা আর সমন্বিত কার্যক্রমই পারবে বাংলাদেশকে আবার ঠিক রাস্তায় ফেরত আনতে। তবে আরেকটি তাড়াহুড়ো করে তৈরি বা গোঁজামিলের বাজেট দিয়ে কি সেটা করা যাবে?

সরকার, সরকারের বাইরে অনেকেই বুঝে হোক আর না বুঝে হোক অকপটেই বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আলোকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর জন্য আসন্ন বাজেট প্রণয়ন বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ক্রমাগত দৃশ্যমান হয়ে ওঠা করোনার আঘাত সবশেষে কোথায় পৌঁছায়, এখনো তা অজ্ঞাত। তবে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের শুরুর দিকের প্রতিবেদন অনুসারে অর্থনীতির দুটি প্রধান খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে করোনায়। এই ক্ষতি হবে রপ্তানি ও উৎপাদন হ্রাসে আর সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ লেনদেন ও চাহিদা কমে যাওয়ায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের প্রাথমিক পর্যালোচনায় অবশ্য বলেছিল, চূড়ান্ত পর্যায়ে এ ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক তো তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে অবস্থা আরও অনেক অনেক খারাপ হবে বলে প্রাক্কলন করেছে।

তা ছাড়া করোনার আপদ বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে এমন এক সময় এসে হাজির হয়েছে, যখন ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের হিসাবের আলোচনার মধ্যেও অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মন্দা দৃশ্যমান হয়ে উঠছিল।

আমরা সবাই জানি, জাতীয় বাজেটের দুটি প্রধান দিক হলো আয় ও ব্যয়। আয় না করে ব্যয় হলে ধারদেনায় জড়াতে হয় সরকারকে। এ জন্য সরকারের আয় বা রাজস্ব আহরণ বাজেট বা অর্থনীতির জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরটিতে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, স্থির হিসাবে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্থনৈতিক বিকাশ হয়েছে। বিশ্বের যেকোনো বিকাশমান অর্থনীতির জন্য প্রবৃদ্ধির এই হার নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।

তবে এই সময়ের চূড়ান্ত হিসাবে বাজেটের ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তবে আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় ৫ দশকে সর্বোচ্চ। এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সরকারের রাজস্ব আয়ের যে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, তা প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এই অর্থবছরেও সরকারের আয় বিপর্যয়ের কারণে মোট রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা তথা জিডিপির ৯ শতাংশের বেশ কিছুটা নিচে থাকবে বলে অনেকেই বলেছেন। অথচ এই অনুপাতকে অর্থমন্ত্রী তাঁর চলতি বাজেট বক্তৃতায় ১৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।

চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে সার্বিক রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ সময়ে মোট ৬৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়, যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। এই হারে যদি রাজস্ব আদায় হয়, তাহলে বছর শেষে জিডিপির ১৩ শতাংশের সমান রাজস্ব আদায় স্বপ্নই থেকে যাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর রাজস্ব আদায় ৭ মাসে সাড়ে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা-আক্রান্ত শেষ চার মাসে রাজস্ব আহরণের বাস্তব অবস্থা কী দাঁড়াতে পারে, তা আমদানির চিত্র সামনে রাখলে কিছুটা স্পষ্ট হবে। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে আমদানি আগের বছরের তুলনায় পৌনে ৩ শতাংশ কমে গেছে। আর এই সময়ে নতুন ঋণপত্র স্থাপনের তথ্য এবং করোনার আঘাতে বৈশ্বিক জোগান ব্যবস্থার ক্ষতি বিবেচনায় নিলে এটা প্রায় নিশ্চিত, বছর শেষে আমদানি ৯-১০ শতাংশ কমে যেতে পারে।

আমরা জানি, আমদানি খাত থেকেই সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে। তবে এই সময়ের রপ্তানি চিত্র আরও নেতিবাচক হওয়ায় সার্বিক উৎপাদন খাতের দুরবস্থারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ অবস্থায় বছর শেষে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরের কথা, শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ২-৩ শতাংশে এমনকি শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে বলেও অনেক নৈরাশ্যবাদীর আশঙ্কা।

সাধারণভাবে সরকারের আয় কমে গেলে ব্যয়ের রাশ টেনে ধরার কোনো বিকল্প নেই। সেটি না করা হলে সরকারকে নিজস্ব প্রশাসন, রাজস্ব ব্যয় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ধারদেনা করতে হয়। সরকারের ধারদেনা নেওয়ার দুটি সূত্র হলো—ব্যাংক খাত আর সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

দেশের মানুষ সঞ্চয়পত্র না কিনলে অর্থের জোগাড় হয় না। আর মানুষের হাতে টাকা না থাকায় এবং কর বৃদ্ধি ও ক্রয়সীমা বেঁধে দেওয়াসহ অন্য কিছু কারণে এই বছরের প্রথম ৬ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৮ শতাংশ কমে গেছে। বাকি ভরসা হলো ব্যাংক খাত। ব্যাংক খাত থেকে ধার নিতে সরকারের কার্যত কোনো বাধা নেই, তবে এতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ বেশির ভাগ সময় সংকুচিত হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আর্থিক ভারসাম্যও কিছুটা ব্যাহত হয়।

সরকারের আয়ের দুর্গতির পরও চলতি খরচ বজায় রাখতে গিয়ে ব্যাংক খাত থেকে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সাড়ে ৩৮ শতাংশ বাড়তি ঋণ নিতে হয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে মাত্র সোয়া ৪ শতাংশ। ব্যাংক খাত থেকে ধার নিয়েও ব্যয় নির্বাহ সম্ভব না হওয়ায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি তহবিল সংসদে আইন পাস করে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ ক্ষেত্রে সরকার ভারতকে অনুসরণ করেছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশি সূত্র থেকে ঋণপ্রাপ্তি দুরূহ হবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ উন্নয়নশীল বলুন আর দরিদ্র বলুন, সবাই দৌড়াচ্ছে ঋণ বা অনুদানের জন্য। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিদেশি সূত্র থেকে নিট অর্থপ্রাপ্তি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমে গেছে, অথচ আগের বছর তা ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। অর্থবছরের বাকি সময় বিদেশি অর্থপ্রাপ্তি আরও কমে যেতে পারে, বিশেষ করে চীনা সূত্র থেকে।

এ বাস্তবতায় বাজেট বাস্তবায়নের বাস্তব যে চিত্রটি দাঁড়াচ্ছে তা হলো, সরকারের আয়ে রেকর্ড পরিমাণে ঘাটতি। এই ঘাটতির জন্য সরকার ঋণ নিয়ে রাজস্ব ব্যয় ও জরুরি উন্নয়ন খরচ সামাল দিতে অনেকটা বাধ্য হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এতে বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যেতে পারে। একপর্যায়ে দেশি ও বিদেশি কোনো সূত্র থেকে যখন আর ঘাটতি অর্থায়ন করা যাবে না, তখন বাজেটের বরাদ্দগুলো ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করতে হবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলোকে সংশোধিত বাজেটে ২০ শতাংশ করে গড় কাটছাঁট করে বাজেট প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। করোনার কারণে আশু ‘বিশেষ অনুদান প্যাকেজ’ বা বিশেষ বিশেষ খাতে অনুদান দিতে হচ্ছে বলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে।

এই কাটছাঁটের অর্থ দাঁড়াবে নতুন অর্থবছরের বাজেট ভিত্তি নিচে নেমে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা বিবেচনায় স্বাভাবিকভাবেই ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গতানুগতিকভাবে চলতি মূল্যে আগের বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জিডিপির অনুপাতে বাজেটের সব কটি লক্ষ্যমাত্রা অনিবার্যভাবে কমবে। তবে চলতি অর্থবছরের মতো বাস্তবায়নের কথা মাথায় না রেখে বাজেট তৈরি করা হলে যেকোনো সংখ্যায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাও সম্ভব।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, যেখানে ৭-৮ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল, সেখানে বাজেট বাস্তবায়নের এই দুরবস্থা কেন দেখা যাচ্ছে? রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে কেন যাওয়া যাচ্ছে না? অপর দিকে রাজস্ব ব্যয় অব্যাহতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, অর্থনীতির এক সূচকের সঙ্গে আরেক সূচকের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, অর্থনীতি ৭-৮ শতাংশ হারে বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার করোনার আগে থেকেই প্রায় মৃত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় বাজারের শেয়ার সূচক প্রায় তলানিতে পৌঁছায়।

ব্যাংকগুলোতে শ্রেণিভুক্ত ঋণের অঙ্ক ক্রমেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনো লক্ষণও বাস্তব কর্মবাজারে ছিল না। অর্থনীতির হালচাল প্রকাশে রাজনীতির মতোই একধরনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ কাজ করছে। বাস্তবে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেছে।

একদিকে আমদানি কমে যাচ্ছে আর অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনেও শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থার আশঙ্কা রপ্তানি খাতে। করোনার প্রভাবের আগেই অর্থবছরের সাত মাসে রপ্তানি আয় পৌনে ৩ শতাংশ কমে গেছে। শেষ চার মাসে বড় ধরনের আয়পতনের আশঙ্কা বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকদের। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলনে এটি বছর শেষে ন্যূনতম ২০ শতাংশ কমবে।

পাঠ্যবইতেই আছে, আমদানি খাত এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতে দুরবস্থা দেখা দিলে রাজস্ব আদায় কোনোভাবে বাড়ানো যায় না। করপোরেট আয়কর প্রধানত ব্যাংকের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলো অনেক সময় অনিয়মিত ঋণ নিয়মিত দেখিয়ে মুনাফার বাড়তি অঙ্ক কষেছে। এতে প্রদর্শিত মুনাফার ৪৫ শতাংশ সরকারের কোষাগারে আয়কর হিসাবে জমা হয়েছে।

কিন্তু যে অর্থ কোনো দিন ব্যাংকের কাছে ফিরে আসবে না, সেটি মুনাফা দেখিয়ে বণ্টন করার এ কাজে ব্যাংকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদকে জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতের পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা পরিচালকেরা পরস্পরের সঙ্গে অনেকটা বোঝাপড়া করে নিয়ে গেছেন। এই হিসাব বেনামে তাঁরা যে অর্থ নিয়েছেন তার বাইরে। ব্যাংকিং খাত বিশ্লেষকদের হিসাব অনুসারে, এই অর্থের পরিমাণ অনেক অনেক বেশি।

গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটিসহ দেশি-বিদেশি নানান পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতি থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বের হয়ে যাওয়ার চিত্র আসছে। ১১ লাখ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবমতে, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা খেলাপি।

কিন্তু ব্যাংক মালিকেরা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে নামে-বেনামে যে টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়ে গেছেন, সেই অর্থ এর সঙ্গে যুক্ত হলে দেখা যাবে ব্যাংক খাতের অর্ধেক ঋণই অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। এতে সার্বিকভাবে আর্থিক খাত ভেঙে পড়তে পারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যতই তারল্য সহায়তা দিক না কেন, এখনকার করোনা সহায়তা বা প্রণোদনার টাকা ফেরত না আনতে পারলে অবস্থা যে ত্রাহি মধুসূদন হবে, তাতে কারো সন্দেহ নেই।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সর্বশেষ এক সাক্ষাৎকারের শেষভাগে বলেছিলেন, ‘অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে এখনো। অর্থনীতির উন্নয়ন অগ্রযাত্রা হয়তো আরও দুই বছর থাকবে। কিন্তু এরপর কী হবে, সেটা বলা মুশকিল।’ তিনি যখন এই সাক্ষাৎকার দেন, তখনো করোনা আঘাত করেনি।

তার দুই বছর সময় সম্ভবত এখন সংকুচিত নয়, প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অর্থনীতির মূল ভিত্তি আর্থিক খাত। এই খাতের অবস্থা নীতিনির্ধারকদের অজানা নয় বলে তাঁরা ব্যাংক অবসায়ন ও একীভূতকরণের আইন ও বিধিবিধান তৈরি করছেন।

এ ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ না নিলে শুধু আর্থিক খাতই নয়, অর্থনীতির মূল ভিত্তিই ধসে যেতে পারে। বাজেট তৈরির এই সময়ে অর্থনীতির মুদ্রা ও রাজস্ব খাতের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য তথ্য-উপাত্ত সামনে রাখা হলে এ সত্য এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। কেউ কেউ আবার প্রচুর পরিমাণ অর্থ পাচারকারী ও বৃহৎ ঋণখেলাপিদের জন্য একটি ‘এক্সিট রুটের’ কথাও বলছেন।

সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিয়ে কেবল আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থনীতির বিপর্যয় কিন্তু ঠেকানো যাবে না। অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রেখে, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনকে সামাল দেওয়ার জন্য সামনে আসছে কঠিন সময়।

আর এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা করছে কর খাত সম্প্রসারণে কিংবা কর আদায়ে দায়বদ্ধতা সৃষ্টিতে ন্যূনতম কোনো সংস্কারের পথে না যাওয়া। ‘শুরুতে অনেক বড় কথা আর বছরের শেষে গোঁজামিলের বাজেট’ সংস্কৃতি থেকে না বেরোতে পারলে আমাদের অমানিশা কাটবে না। বাজেট করে খুব লাভও হবে না।

মামুন রশীদ: অর্থনীতিবিদ