শ্রমিকের ওপর হামলা

করোনা সংকট অন্যান্য শিল্পের মতো তৈরি পোশাকশিল্পকেও মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালিকপক্ষ যখন কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কারখানা খোলার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফতেহ উল্লাহ ও জালাল হাজি স্পিনিং মিল এলাকায় শ্রমিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে ১০ জন শ্রমিক আহত হন। শ্রমিকেরা বলেছেন, এপ্রিল মাসের শতভাগ মজুরি ও ঈদের বোনাসের দাবিতে তাঁরা যখন বিক্ষোভ করছিলেন, তখন তাঁদের ওপর মালিকপক্ষের লোকজন হামলা চালায়। আর মালিকপক্ষ হামলার কথা অস্বীকার করে বলেছে, শ্রমিকেরা কারখানায় ভাঙচুর করছিলেন। মালিকপক্ষ যদি হামলা না করে থাকে, তাহলে শ্রমিকেরা আহত হলেন কীভাবে? তাদের অনুমতি ছাড়া বাইরের লোক সেখানে ঢোকার কথা নয়। অন্যদিকে আন্দোলনের নামে আর যা–ই হোক কারখানা ভাঙচুর করার সুযোগ নেই। নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই আন্দোলন করতে হবে।

মালিকপক্ষ প্রথমে এপ্রিল মাসে শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ মজুরি দেবে বলেছিল। শ্রমিকদের দাবি, শতভাগ মজুরি ও ঈদের বোনাস দিতে হবে। মালিকপক্ষ পরে ৬৫ শতাংশ মজুরি দিতে রাজি হলেও বোনাসের বিষয়ে কিছু বলেনি। শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ হওয়ার এটাই কারণ। তাদের যুক্তি হলো করোনাজনিত এক মাসের অচলাবস্থার জন্য বার্ষিক উৎসব বোনাস বন্ধ থাকতে পারে না। তাঁদের এই দাবি যৌক্তিক।

মজুরি নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তার মীমাংসা হওয়া উচিত। মালিকদের বুঝতে হবে কেবল পুঁজি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে কারখানা চলে না, উৎপাদন হয় না। শ্রমিকেরাই কারখানার প্রাণ। ব্যবসার সমৃদ্ধি চাইলে শ্রমিকদের অন্তত ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা দিতেই হবে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে মজুরি-ভাতার দাবিতে শ্রমিকেরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। অনেক সময় শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি না দিয়ে মালিক কারখানা বন্ধ করে দেন। ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি না দিলে বা কারখানা বন্ধ হলে পরিবার–পরিজন নিয়ে তাঁরা কীভাবে জীবনধারণ করবেন? এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পাশাপাশি সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

অর্থনীতির এই ভঙ্গুর অবস্থায় পোশাকশিল্পে শান্তি ও স্থিতি বজায় রেখে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া জরুরি। এ জন্য মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষেরই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।