আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু

‘শিরোনামহীন-৫’, শিল্পী: সৈয়দ ফিদা হোসেন
‘শিরোনামহীন-৫’, শিল্পী: সৈয়দ ফিদা হোসেন

জন্ম হতে মৃত্যু অবধি মানুষের দীর্ঘ কিংবা নাতিদীর্ঘ যে ভ্রমণ তাতে যেমন আনন্দ আছে তেমনি রয়েছে বেদনাও। রবীন্দ্রনাথই তো বলেছেনই—‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ ভাবতে ভালো লাগছে, গভীর এই জীবনবোধ, এই দর্শন নিয়ে ছবি আঁকছেন একেবারে তরুণ শিল্পী সৈয়দ ফিদা হোসেন। তাঁর সিরিজের শিরোনাম ‘এনিগমা’ অর্থাৎ প্রহেলিকা। বর্তমানে এই শিরোনামে তাঁর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী চলছে ঢাকার ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে।
এখানে আছে ১৪টি চিত্রকর্ম। দুই বছর ধরে করা তাঁর এই সিরিজ ছবিগুলোর শিরোনাম ‘আত্মানুসন্ধান ও রঙিন দুনিয়া’, ‘প্রহেলিকা’ এবং ‘শিরোনামহীন’। মানুষের নিটোল অবয়বকে ব্যবচ্ছেদ করে প্রহেলিকার ভেতর দিয়ে তিনি জীবনের রহস্যময়তা উদ্‌ঘাটন করতে চেয়েছেন, যেনবা তাঁর অভীষ্ট মোক্ষলাভ। মানুষের মৃত্যুময় পরিণতিকে জীবনচক্রের স্বাভাবিক নিয়ম মনে করার পরও—‘মরণ রে, তুঁহুঁ মম শ্যামসমান’—এই চেতনায় তাকে কি মহিমান্বিত করতে চাইলেন ফিদা? ফলে তিনি তাঁর চিত্রপটের প্রেক্ষাপটকে রাঙালেন উজ্জ্বল রুপালি রঙে। এমনকি শিল্পী যে মৃতদেহ উপস্থাপন করেছেন ছবিতে, সেগুলো এ​ে​কবারেই স্বাভাবিক। যেন মৃত্যুকে দীর্ঘঘুম মনে করার প্রাচীন মিসরীয় বিশ্বাস তাঁর এই অঙ্কনরীতিতে গ্রহণ করেছেন তিনি। আবার কয়েকটি ছবিতে অবয়বের বাইরের রূপ ঠিক রেখেই রঞ্জনরিশ্মর মাধ্যমে মানুষের যে ভেতর-কাঠামো পাওয়া যায় নীলাভ বর্ণে অনুরূপ সেই ভেতরকার কাঠামোর ইঙ্গিত শরীর বা অবয়বের ওপর জুড়ে দিয়েছেন।
তবে ‘শিরোনামহীন’ সিরিজের ছবিগুলোতে অবিকৃত সুন্দর রঙিন অবয়বের মৃতকে কীভাবে বুঝবেন দর্শক? বিষয়টি উপলব্ধি করানোর জন্য শিল্পী মৃতদেহ ঘিরে সৃষ্টি করেছেন মাছির মিছিল। আর সে মাছিগুলো অঙ্কনে যথার্থ হলেও সোনালি রঙের আবহে এবং রুপালি রঙে আঁকায় চিত্রের রহস্যময়তা জমাট বেঁধেছে বুঝি আরও। একই শিরোনামে নিটোল রক্তবর্ণ আবহে কাটা কাঁচির ডিটেইল ছবি এবং এর হাতল বেয়ে কালচে রক্ত গড়িয়ে পড়ার আগ মুহূর্তকে ধারণ করে পৃথিবীব্যাপী চলমান সহিংস সময়ের বাস্তবতাই আবার তুলে ধরেছেন ফিদা।

তবে ফিদা হোসেনের ‘আত্মানুসন্ধান ও রঙিন দুনিয়া’ শীর্ষক সিরিজের কাজে প্রকাশ পেয়েছে পূর্বোক্ত দুটি সিরিজের শরীর ব্যবচ্ছেদের রহস্য থেকে বেরিয়ে আসার অভিপ্রায়, রয়েছে নানা ইশারাও। এ সিরিজের চিত্রপটে নানা অভিব্যক্তির একাধিক মুখাবয়ব প্রয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্রস্থলে তৈরি হয় লালরঙা এক জ্যামিতিক ত্রিকোণ। হতে পারে এটি চলমানতার প্রতীক। অর্থাৎ চারপাশে ক্রমাগত যা ঘটছে, যে সহিংসতার চিত্র আমরা দেখছি প্রতিদিন, সেসবের একধরনের ইঙ্গিত বোধ করি এই শিল্পীর প্রকাশভঙ্গিতে পেয়ে যাই আমরা। ১৬ জুলাই শুরু হয়েছে প্রদর্শনীটি, শেষ হবে ২৮ জুলাই।