ঈদে ভোগ্যপণ্যের বাজার

শুক্রবার প্রথম আলোর শেষ পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, দেশের বাজারে মুরগির দাম বেশ বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে রাজধানী ঢাকার বাজারে যে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১১০ টাকা ছিল, তা বেড়ে এখন ১৬০ টাকায় উঠেছে। সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক মাসে মুরগির দাম ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।

কিন্তু স্মরণ করা যেতে পারে, কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে সরকার গত মার্চের শেষ সপ্তাহে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর সারা দেশের গণপরিবহন সীমিত হয়ে গেলে মুরগির দাম হঠাৎ করে ভীষণভাবে কমে গিয়েছিল। খামারিরা মুরগি বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। আর ভোক্তাপর্যায়ে তা ছিল ১১০ টাকার মতো। হ্যাচারির মালিকেরা প্রচুর মুরগির বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল।

প্রায় মাস দেড়েক পরে লকডাউন শিথিল করার পর এখন দেখা যাচ্ছে, মুরগির বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ এটাই। যেকোনো পণ্যের চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে, বাজারের এই সাধারণ নিয়ম যেন ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য দুটো বিষয় নিশ্চিত করতে হয়। প্রথমত পণ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত উৎপাদনক্ষেত্র থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পুরো সরবরাহ লাইনটির নিরবচ্ছিন্ন নির্বিঘ্নতা নিশ্চিত করা। মুরগির ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তার প্রধান কারণ সরবরাহব্যবস্থার সমস্যা। হ্যাচারি মালিকেরা ছুটির শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন বাচ্চা ওঠাতে পারেননি। ফলে এখন মুরগির বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং সেই কারণে দাম বেড়েছে।

চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা নানা কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্য পরিবহনকারী যানবাহন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলে কোনো বাধানিষেধ নেই। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমার কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। ফলে পণ্য পরিবহনব্যবস্থায় কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরের সময় কিছু খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে, সেই অনুপাতে সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে দাম বেড়ে যেতে পারে। মহামারি শুরুর দিকে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে, তারপরে তা আর কমেনি। ঈদের সময় যেন আরও না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। সরকার পাইকারি পর্যায়ে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে; কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে এগুলো নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তেল, চিনি ও অন্যান্য যেসব খাদ্যপণ্যের চাহিদা ঈদের সময় বেড়ে যায়, কোনো পর্যায়েই যেন সেগুলোর সরবরাহে ঘাটতি দেখা না দেয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

যেহেতু পণ্যের চাহিদা বাড়া-কমার ওপর দাম বাড়া-কমা নির্ভর করে, সেহেতু চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের যে অংশটি সংঘবদ্ধভাবে বাজারে কৃত্রিম ঘাটতি সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফা লাভের চেষ্টায় থাকে, তাদের সতর্ক করে দিতে হবে। বাজারে কোনো কারসাজি বরদাশত করা যাবে না।

ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন—সব পর্যায়ে নিয়োজিত মানুষদের সংক্রমণ এড়াতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করাসহ সব সুরক্ষাবিধি মেনে চলা একান্ত জরুরি।