ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি

সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে আম্পান নামের একটি ঘূর্ণিঝড় ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। দেশজুড়ে যখন কোভিড-১৯ মহামারি চলছে এবং প্রায় পুরো জনপ্রশাসন এই জাতীয় সংকট মোকাবিলায় ব্যস্ত, এমন সময়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আসছে এক বাড়তি বিপদ নিয়ে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

আবহাওয়াবিদেরা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের শক্তি সঞ্চয়ের গতিবিধি লক্ষ করে অনুমান করছেন, এটি অত্যন্ত প্রবল হয়ে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ আরও কত প্রবল হতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে অতি প্রবল একটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সামলানোর সব ধরনের প্রস্তুতিই নিতে হবে এবং তা এখনই। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। সুতরাং মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারসহ সব ধরনের জলযানে অবস্থানরত মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা নিতে হবে। গভীর সমুদ্র থেকে সবাইকে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসার জন্য তাগিদ দিতে হবে এবং সবাইকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।

সাগরে মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে জড়িত যাঁরা, সাধারণভাবে তাঁদের ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আত্মরক্ষার অভিজ্ঞতা ও কৌশলগুলো জানা থাকে। সেসব কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের যা প্রয়োজন তা হলো পর্যাপ্ত সময় থাকতেই সঠিক তথ্য ও সতর্কসংকেত পাওয়া। উপকূলের কাছাকাছি বিচরণরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে সেই নির্দেশনা তাঁদের কাছে এমন সময় পৌঁছাতে হবে, যাতে তঁারা সময়টা পান। অনেক সময় অত্যন্ত স্বল্প সময়ের নোটিশে তঁাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়, যা সবার পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটে থাকে। এটা অবশ্যই এড়াতে হবে। এ জন্য আবহাওয়া কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং যাঁরা সাগরে অবস্থান করছেন, তাঁদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি রাখতে হবে।

আম্পান আঘাত হানতে যাচ্ছে এমন উপকূলীয় এলাকাগুলোর সাধারণ অধিবাসীদের ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত রাখতে হবে। তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন হলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সব মানুষকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা-কৌশলগুলো মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সীমিত পরিসরে একসঙ্গে অনেক মানুষকে আশ্রয় নিতে হলে তাঁদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু বিষয়টি যথাসম্ভব নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা প্রয়োজন।

নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষসহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে অন্ততপক্ষে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সবাই এটা করতে সক্ষম কি না, সেটা দেখতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো তাদের জন্য মাস্ক সরবরাহ করতে পারে। খাবার ও পানির মতোই মাস্কও এখন তাদের জীবন রক্ষার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।