বিপুল অকার্যকর নমুনা

রাজশাহীতে পাঁচ সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে ৩৮৪টি অকার্যকর নমুনা পাওয়া গভীর উদ্বেগজনক। সবচেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয়, এটি একটি বিচ্ছিন্ন চিত্র না–ও হতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি মাসেই দিনে ১০ হাজার পরীক্ষা হবে। ৪২টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আরও ১৫টি ল্যাব স্থাপন করা হবে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা শুরু থেকেই বেশি পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। কিন্তু সেই পরীক্ষা যদি যথাযথভাবে করা না যায়, তবে পরীক্ষা বাড়িয়ে ফল পাওয়া যাবে না। পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজটি জটিল এবং পেশাদার ও প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমেই তা হওয়া উচিত।

এটি দুর্ভাগ্যজনক যে ৮ থেকে ১২ বছর ধরে কথিত আইনি জটিলতায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ কার্যত বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভগ্নকণ্ঠে বলেছেন, ‘বেশ কিছু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের’ কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে এই টেকনোলজিস্ট সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র গোষ্ঠীগত কোন্দল রয়েছে। পাল্টাপাল্টি রিট মোকদ্দমা দায়েরের মাধ্যমে এসবই নিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এর দ্রুত অবসান জরুরি। কারণ, পেশাদার ব্যক্তিদের হাতেই নমুনা সংগ্রহ হতে হবে। মূলত শুধু নমুনা সংগ্রহই নয়, ল্যাব টেস্টের চৌদ্দ আনা কাজ তাঁরাই করে থাকেন।

রাজশাহীতে বিপুলসংখ্যক নমুনা অকার্যকারিতার কারণ অবিলম্বে খুঁজে বের করা দরকার। স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে যেসব স্বাস্থ্যকর্মীকে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় করা হয়েছে, তাঁদের ওপর নজরদারি দরকার। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আদৌ কোনো নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে কোনো তরফে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর ফলে দেশে নমুনা বাড়ানো এবং প্রতিদিন ব্রিফিংয়ে টেস্ট ও তার ফলাফলের যে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা একটা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। নমুনা যে সর্বোচ্চ সতর্কতায় এবং নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে, সেই নিশ্চয়তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে ল্যাবভিত্তিক নমুনা সংগ্রহ, রিপোর্ট তৈরি এবং ত্রুটিপূর্ণ নমুনাসংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।

সরকারি নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চয় একমত হবেন যে টেস্টের ফলাফলের ওপর পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মকৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরির বিষয় সম্পর্কিত। এমনিতেই আমরা পিসিআর টেস্টের সীমাবদ্ধতার দিক দৃশ্যত জ্ঞাতসারে উপেক্ষা করে চলেছি। বিশ্বব্যাপী এটা প্রতিষ্ঠিত যে করোনা নেগেটিভ বা পজিটিভ এলে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয়বার টেস্ট করাতে হয়। সেখানে আমরা মাত্র একবার টেস্টের ওপর নির্ভরশীল। উপরন্তু বহু স্থানে নমুনা পরীক্ষার ফল আসতেই চার-পাঁচ দিন লাগে। আবার নেগেটিভ হলে ফল পর্যন্ত জানানো হয় না।

রাজশাহীর ঘটনাটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হোক।