সচেতনতা সৃষ্টির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

‘বাড়িতে কেউ আছেন’—এটি কোনো পাওনাদার বা ডাকপিয়নের জিজ্ঞাসা নয়। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করছেন, তার সূচনা প্রশ্নই ছিল এ রকম।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার উপজেলার ঘাগাটিয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাড়িতে কেউ আছেন, আমরা হাসপাতাল থেকে এসেছি।’ তাঁদের কথা শুনে চার-পাঁচজন লোক বেরিয়ে আসেন। এরপর মাস্ক ও গ্লাভস পরা ওই দুই স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস সম্পর্কে বাড়ির বাসিন্দাদের অবহিত করেন এবং উপসর্গ দেখা দিলে কী করতে হবে, তা–ও জানিয়ে দেন। বিশেষ করে ঘরের বাইরে বের হতে হলে যে তাঁদের মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে, সেসবও তাঁরা বুঝিয়ে দেন।

স্বীকার করতে হবে, সারা দেশে করোনার প্রকোপ বাড়লেও সাধারণ মানুষ এর বিপদ ও করণীয় সম্পর্কে জানে না। এ ছাড়া করোনা সম্পর্কে একধরনের ভুল ধারণাও আছে। কোনো বাড়ির কেউ করোনাভাইরাসের শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তি তো বটেই, পুরো বাড়ির বাসিন্দাদের হেয় চোখে দেখা হয়। অনেক সময় সামাজিকভাবে বর্জন করা হয়। সামাজিক দূরত্ব মানে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো নয়। আবার একশ্রেণির লোক ধর্মের নামে নানা রকম অলীক কথাবার্তাও বলছেন। গ্রামের সহজ–সরল মানুষ তা বিশ্বাসও করছে। 

 এই প্রেক্ষাপটে উপজেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। প্রশাসন ১০ ও ১১ মে ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ৫০ জন পরিবার পরিকল্পনাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়। এরপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সজাগ করছেন। কর্মসূচিটি তদারক করছেন স্থানীয় সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ ইসমত আরা। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে।’ তাই করোনার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের জাগতে হবে। অন্যদের জাগাতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পুরো দেশ জেগে উঠবে এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ পরাজিত হবেই। কাপাসিয়ার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সজাগ করার দৃষ্টান্ত অন্যত্রও অনুসৃত হোক।