উভয়সংকটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দুই মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপদগ্রস্ত। শিক্ষার ক্ষতিটা সরকারি-বেসরকারি উভয় শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বইতে হচ্ছে। কিন্তু করোনাসংকটের কারণে বেশি বিপদে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তারা একদিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

দেশে মোটা দাগে তিন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। একশ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সরকারি। শিক্ষার্থীদের ফি পাক বা না পাক, সরকারি কোষাগার থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। আরেক শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি হলেও এমপিওভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সিংহভাগ সরকারি কোষাগার থেকেই দেওয়া হয়। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-কর্মচারী আছেন, যাঁরা সরকারি সুবিধা পান না।

 এর বাইরে বেসরকারি মালিকানায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এগুলোর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৬২০টি। মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০ হাজার ৬৬০। এর মধ্যে সরকারি ৬৭৫। সরকারি ও বেসরকারি মিলে কলেজের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫১। এগুলোর মধ্যে বেসরকারি ৩ হাজার ৯০০। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪৬টি ও বেসরকারি ১০৫টি।

মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং এতে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। আবার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না নিলে তারা শিক্ষকদেরও বেতন দিতে পারবে না। সরকার ছাত্র–বেতন নেওয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন মানবিক হতে, চাপ দেওয়া যাবে না।

গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। প্রথমে ধারণা করা গিয়েছিল, সংকট স্বল্পস্থায়ী হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার শিক্ষক-কর্মচারীদের অভুক্ত রাখা যাবে না। সে ক্ষেত্রে উত্তরণের বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে।

সরকার তৈরি পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা যাতে বেতন-ভাতা পান, সে জন্য শিক্ষা প্রণোদনা ঘোষণা করা উচিত। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা ২ শতাংশ হারে ঋণ পেতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেন পাবে না?