করোনাকালের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বাজেট বাস্তবায়ন

অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যখন বাজেট প্রণয়নে ব্যস্ত থাকে তখন যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে অর্থ বরাদ্দ ও শুল্ক-কর নির্ধারণ পলিসি তৈরি করে, সে কাঠামোটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পর কিংবা বাজেটকাঠামো তৈরি করার পর্যায়ে গণমাধ্যমে থিংক-ট্যাংক ও সুশীল সমাজের যেসব মতামত প্রকাশ করা হয়, তা গ্রাহ্য করার সুযোগ থাকে না। সে জন্য বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা পর্বটি এপ্রিল মাসেই সেরে নেওয়া হয়, যা এ বছর করা সম্ভব হয়নি। তবে বাজেট প্রণয়নে প্রতিবছরই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রচুর চিন্তাভাবনা ও পরিশ্রম করতে হয়। বাজেট ঘোষিত হওয়ার পর অবশ্য অনেকেই সমালোচনা করে বলেন, ‘গতানুগতিক বাজেট’, ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’, ‘কাট-পেস্ট’ ইত্যাদি।

বস্তুত বাজেটের ওপর প্রথম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক-কর নির্ধারণ অর্থাৎ ফিসক্যাল পলিসি বিষয়ে। শুল্ক-করবিষয়ক এসআরওগুলোও বাজেট ঘোষণার দিনই জারি হয়ে যায়। ফলে দ্রব্যমূল্যের ওপর ঘাত-প্রতিঘাতও বাজেট জারির তারিখ থেকেই শুরু হয়। সে জন্য শুল্ক-করসংক্রান্ত পরিবর্তন বছর বছর না করে অন্তত চার-পাঁচ বছর যথাসম্ভব অপরিবর্তিত রাখলে ব্যবসা ও বিনিয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি না হলে সাধারণ ভোক্তারাও খুশি থাকেন।

অন্য দিকে বাজেটে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার বজায় রাখা এবং চালু প্রকল্পে বরাদ্দ পর্যাপ্ত থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন সুষ্ঠু হয়। তবে বছরভিত্তিক অগ্রাধিকারে পরিবর্তনও আসে, যা সমন্বয় করতে হয়। মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বাজেট বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মন্ত্রী ও সচিবদের কেন্দ্রীয় তদারকি। সে জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ মন্ত্রী কিংবা সচিবের সভাপতিত্বে মাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন সভা করে থাকে। প্রকল্পের পরিচালকসহ বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার অবশ্য বর্তমানে বড় বড় প্রকল্পে পূর্ণকালীন পরিচালক নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা ও অসততার কারণে একদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন বিলম্ব হয় অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয়ও বৃদ্ধি করতে হয়। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধি পরিপালন করে টেন্ডার প্রক্রিয়াকরণ ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ও খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মন্ত্রী ও সচিবদের সরাসরি তত্ত্বাবধান স্বচ্ছতা আনয়ন ও সময় সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।

টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের ‘কর্মী’ অথবা ‘জনপ্রতিনিধিদের’ হস্তক্ষেপে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও দুর্নীতি ঢুকে পড়ে। দেশপ্রেম ও সাহসের সঙ্গে এ ধরনের হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করতে পারলে বাস্তবায়নে গুণগত মান বজায় থাকে এবং সরকারি খরচের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। অর্থাৎ, ঠিকাদার নির্বাচনে যাতে অনিয়ম না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অবকাঠমো নির্মাণবিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ভালো ঠিকাদার নিয়োজিত থাকলে সর্বোপরি কর্ম সম্পাদনে ঠিকাদার যদি ভেতর ও বাইরের কোনো ‘চাঁদাবাজি’র শিকার না হন, তবে বাস্তবায়নে গুণগত মান বজায় রাখতে পারবেন।

প্রকল্প নির্বাচনেও কখনো কখনো নানা ত্রুটি লক্ষ করা যায়। অগ্রাধিকার নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি কিংবা বিশেষ মহলকে খুশি করার ধান্ধা থাকলে সঠিক কিংবা জনমুখী গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার অংশ থাকলে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাদের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ ও পরামর্শকদের প্রতিবেদনপ্রাপ্তি ইত্যাদিতে প্রকল্প গ্রহণের সময় যেমন দীর্ঘসূত্রতা হয় তেমনি প্রতিটি স্তরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মতি গ্রহণে যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়। তবে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী উভয়ের সুষ্ঠু নজরদারির ফলে অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পের গুণগত মান নিশ্চিত হয়।

বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক খরচের আওতায় বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ থাকে। সেসব খরচের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাও জরুরি। মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসারের (সচিব) মাধ্যমে এসব খরচ সম্পাদিত হয়। সচিবের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অধস্তন কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সততা, সর্বোপরি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সততা, জবাবদিহি ও দেশপ্রেম এসব ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, অফিসের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ক্রয় ও ব্যবহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন খরচ, হাসপাতালের রোগীর ওষুধ ও খাওয়া খরচ, কৃষি উপকরণ ক্রয় ও সরবরাহ কিংবা সামাজিক সুরক্ষা খাতের ব্যয় বা ত্রাণ তৎপরতার ব্যয় উল্লেখযোগ্য।

এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক-কর ধার্যকরণের মাধ্যমে বাজেটের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের বা বাস্তবায়নের আলোচনায় আসা যাক। রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কতিপয় অর্থনৈতিক সূচকের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহের প্রয়োজন হয়। যেমন, আমদানি ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো অবস্থা অর্থাৎ সচল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি ও সরবরাহ চেইনের ঊর্ধ্বমুখিতা, সঠিক আর্থিক নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে শিল্পায়ন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি ও যথাযথ তদারকি, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন ও শুল্ক-কর প্রদানে বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি। বিগত প্রায় ১০-১৫ বছর দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি থাকার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেমন ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, রাজস্ব আহরণেও তেমনি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।

রাজস্ব আহরণের গতিবৃদ্ধির জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাজস্ব প্রশাসনের প্রয়োজনীয় বিস্তৃতি ও আধুনিকায়নের যে পদক্ষেপ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সেটি করা হলে প্রত্যক্ষ কর, ভ্যাট ও শুল্ক প্রশাসনের বিস্তৃতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই তিন অনুবিভাগেই করজাল সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। কর, ভ্যাট ও শুল্ক প্রশাসনে আধুনিকায়ন তথা সফটওয়্যার ও মেশিনের ব্যবহার এবং করদাতা ও ব্যবসায়ীদের বাধ্যতামূলকভাবে এসবের আওতায় আনতে পারলে রাজস্ব আহরণে বৈপ্লবিক ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন আসবে।

আসন্ন বাজেট বাস্তবায়নে উল্লিখিত স্বাভাবিক কর্মপদ্ধতি অবলম্বনের পাশাপাশি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট স্থবির ও লন্ডভন্ড অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ পূর্ণমাত্রায় ছড়াচ্ছে। ১৯ মে পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১২৫। এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭০। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে অনেকের ধারণা। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তারের কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার দুরবস্থা জনগণের সামনে প্রকাশ পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় হাসপাতালসমূহের ওপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণহীনতা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসাসামগ্রী ও বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় আইসিইউ, ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপ্রতুলতা ও যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে সমন্বয়হীনতা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।

এ অবস্থায় সরকারের সামনে প্রথম কাজ হলো সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাওয়া। সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। গণপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইনস, পর্যটন এবং যাবতীয় জনসমাগম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য, পরে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে কলকারখানা ও দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অভাবী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মোটা দাগে, দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতসমূহ হচ্ছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাতসামগ্রী, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য সার্ভিস সেক্টর, এয়ারলাইনস, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ও নির্মাণ খাত, দেশে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিকসামগ্রী, নির্মাণশিল্প, রড-সিমেন্ট প্রস্তুত শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতসহ নিজ উদ্যোগে চালিত ক্ষুদ্র পেশা ও ব্যবসা। এসব খাতে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিভিন্ন হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। দৈনন্দিন করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় লকডাউন ও ছুটি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ হবে কল্পনাতীত। গত বছরের তুলনায় এ বছরের বিদেশ থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। আগামী বছরের চিত্র হবে আরও ভয়াবহ। জ্বালানি তেলের চাহিদা ও মূল্য কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে দলে দলে শ্রমিক কর্মহীন হয়ে দেশে চলে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২৯ হাজার শ্রমিক বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসার অপেক্ষায় আছেন।

ইতিমধ্যে সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ছোট-বড় শিল্প ও ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের মধ্যে এ প্যাকেজের অর্থ অবিলম্বে বিতরণ শুরু করা প্রয়োজন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ব্যাংকগুলো এখনো ঋণ বিতরণে প্রস্তুত নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ আবার বৃহৎ ঋণখেলাপিদের এক্সিট রুটের কথাও ভাবছেন। ইতিমধ্যে, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের দুই মাসের সুদ স্থগিত (মাফ) করে দেওয়া হয়েছে এবং কিস্তি প্রদান স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এ বছর বেশ কিছু ব্যাংক লোকসান গুনতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক্সপানশনারি মনিটরি পলিসি (Expansionary Monetary Policy) অবলম্বনের মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে শিগগিরই প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ শুরু করতে হবে। বিবিএসের খানা জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে ৫ কোটি লোক দরিদ্র এবং প্রায় ৬ কোটি লোক কর্মহীন।

দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় অর্থনীতির চাকা সচল করাসহ এবারের বাজেট বাস্তবায়ন খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং বাকি প্রায় ২৫ শতাংশ সরকারি বিনিয়োগ। ইউরোপ–আমেরিকাসহ পৃথিবীর চরম আক্রান্ত অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের রপ্তানিমুখী কতিপয় শিল্পোদ্যোক্তার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে যে তারা স্থগিত করা কিছু রপ্তানি আদেশ পেতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই উৎপাদনে ফিরে আসতে চান।

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রায় ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতি সচল হলে তথা দেশের ১৭ কোটি মানুষের ভোগ চাহিদা ও সরবরাহ চেইন এবং কর্মসংস্থান স্বাভাবিক হলে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধ ও যথাযথ চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিয়েই অর্থনীতিকেও সচল করতে হবে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অধিক সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতালও করোনা চিকিৎসার উপযোগী করতে হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে সব শিল্পকারখানা চালু, বন্দর চালু, আমদানি-রপ্তানি চালু করা হলে ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেসব অর্থনৈতিক খাত এখনই চালু করা সম্ভব হবে না, সেসবের শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে হবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ বাংলাদেশেও আসতে পারে। সে জন্য কৃষি, পোলট্রি, ডেইরি সেক্টরে উৎপাদন ঠিক রাখার পাশাপাশি বাজারজাতকরণের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং দ্রুত বিভিন্ন খাতের উৎপাদন চালু করতে হবে। বাজেটে বরাদ্দ করা সরকারি অর্থের ব্যয় যথাযথ হওয়া নিশ্চিত হলে কর্মসংস্থান ও কেনাবেচার পাশাপাশি সরকারি রাজস্বের সংস্থান হবে। চাহিবামাত্রই রাজস্বের ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। সরকার প্রায় ৪০ বছর ধরে একটি রপ্তানিমুখী খাতকে নানা সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলেছে। এ খাতেই প্রণোদনা ও সরকারি সুবিধার অপব্যবহার বেশি শোনা যায়। সরকারের কাছ থেকে রাজস্ব ছাড় ও নানা সুবিধা শুধু গ্রহণ করা নয়, সরকারকেও এখন অন্যান্য শিল্পের মতো রাজস্ব দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায়ই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান।