কালভার্ট বন্ধ করে গোয়াল

‘সরকারি সম্পত্তি’ মানে সরকারের সম্পত্তি, অর্থাৎ জনগণ যার মালিক। সেই সম্পত্তি জনগণের ভোগ করার কথা, কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়। 

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বহু ক্ষেত্রেই সরকারি সম্পত্তির মালিক আসলে আর জনগণ নেই। এ সম্পত্তি ভোগদখলে থাকে প্রভাবশালীরা। কার্যত তারাই
এর মালিক।

উন্মুক্ত জলাশয় ঘিরে ফেলে কিংবা বাঁধ দিয়ে কত জায়গায় যে প্রভাবশালীদের মাছের খামার হয়েছে, তার কোনো লেখাজোকা নেই। একইভাবে রাস্তা দখল, পুকুর দখল তো আছেই। এতে দু–তিনজন তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করে। অন্যদিকে বাকি মানুষকে অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। আর এই জবরদখলের চর্চা এতটাই প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে যে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।

পুকুর, রাস্তা বা মাঠ দখলের ঘটনা হরহামেশা ঘটলেও সরকারি কালভার্ট বন্ধ করে তার ওপর গোশালা বানানোর অভি­নব অরাজকতা দেখা গেল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ড গ্রামের খান পাড়ায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, খান পাড়ার বৃষ্টির পানি বের হওয়ায় জন্য গ্রামের রাস্তায় একটি কালভার্ট রয়েছে। রাস্তাটি গ্রাম থেকে বের হয়ে কোটচাঁদপুর-সাব্দালপুর সড়কে মিশেছে। কালভার্টের কারণে বৃষ্টি হলেও খান পাড়ায় পানি জমত না। খান পাড়াসহ পাশের এলাকার পানি ওই কালভার্ট দিয়ে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে বড় বিল পার হয়ে বলুহর বাঁওড়ে নেমে যেত। কিন্তু তিন বছর ধরে এই কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সেখানে হাসান আলী নামের এক ব্যক্তি তাঁর গরু রাখার জন্য গোয়ালঘর তৈরি করেছেন।

কালভার্ট দিয়ে পানি নামতে না পেরে তা জমতে শুরু করেছে। প্রথম দুই বছরে পানি একটু কম হওয়ায় তেমন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় বৃষ্টিতে খান পাড়ায় হাঁটুপানি জমে যায়। ঘরগুলোর মধ্যেও পানি উঠে পড়ে। স্থানীয় মানুষ কালভার্টের মুখ খুলে দিতে গেলে হাসান আলী চোটপাট দেখিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা এখন অসহনীয় অবস্থায় চলে এসেছে। কালভার্টের মুখে সরকারি জায়গা দখল করে পানির গতিপথ বন্ধ করা যে আইনের লঙ্ঘন, তা হাসান আলীর না জানার কথা নয়। কিন্তু সেই জানা কথা মানতে গেলে দখলদারি ছেড়ে দিতে হয়। এটি তিনি মানতে পারছেন না। এইকারণে তিনি পৈতৃক সম্পত্তিজ্ঞানে সরকারি সম্পদ আত্তীকরণ করেছেন।

সমস্যা হলো, সমাজে এই ‘হাসান আলী’রা কম নন। সমাজের প্রতিটি স্তরে তাঁদের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। এই শ্রেণির লোকেরা যে সমাজে বাস করছেন, সেই সমাজকে বিপদে রেখে সেই সমাজেরই মাথা হয়ে আছেন। এদের মূলোৎপাটনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ যতটা না জরুরি, তার চেয়ে বেশি জরুরি সামাজিক জাগরণ। এঁদের প্রশাসনিক প্রতিরোধের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ করা দরকার।