ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন

ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনের শিকার হয়ে যে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করলেন, তাঁদের তিনজন ছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তাঁরা বাঁচার জন্য দেশের অন্যতম সেরা ও ব্যয়বহুল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে করোনাভাইরাসে নয়, তাঁরাসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয় আগুনের ঘটনা বা দুর্ঘটনায়। ঘটনাটি এই করোনাকালে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার আরেকটা অগ্রহণযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

গত ২৭ মে রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে আলাদা থাকা জরুরি বিভাগে আগুন লাগে। বলা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় দমকল বিভাগের তরফে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে—চূড়ান্ত প্রতিবেদন এলে আগুন লাগা এবং পাঁচটি করুণ মৃত্যুর কার্যকারণ পরিষ্কার হবে। কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান থেকেই বোঝা যায়, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট আগুন আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য কঠিন বা জটিল কোনো বিষয় নয়। কিন্তু জানা যায়, হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণের যে ব্যবস্থা ছিল, তা মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই বিপদের সময় সেগুলো কাজে লাগেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করেন।

যে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় বিপুল, যেখানে দেশের উচ্চবিত্ত ও ধনীরাই সাধারণত যান, সেই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ রকম নাজুক অবস্থায় থাকল কীভাবে? প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে অগ্নিনির্বাপণ ও আগুন লাগলে নিরাপদ প্রস্থান পথের পরীক্ষা ও মহড়ার কথা আইনে বলা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র ও সামগ্রীর কার্যকারিতা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা স্বাভাবিক বিষয়। সেই স্বাভাবিক কাজটাই বেশির ভাগ সময় কেন করা হয় না? তাজরীন গার্মেন্টস থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার দুটি আগুন-ট্র্যাজেডি নিকটকালের ঘটনা। গত বছর রাজধানীর বনানীতে বহুতল ভবনে আগুন লাগা এবং এর মর্মান্তিক পরিণতির পর এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে সজাগ ও প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছিল। এসবের কিছুই কি ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের টনক নড়াতে পারেনি? ঘটনা ঘটার আগে প্রস্তুতির ব্যাপারটা সর্বদাই কেন উপেক্ষিত হয়? আমাদের এই সার্বিক অবহেলাই কি করোনা মোকাবিলায় বিশৃঙ্খলা ও অপ্রস্তুতির মধ্যে ফুটে উঠছে না!

শিক্ষার কোনো শেষ নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালের আগুনের ঘটনা থেকে সবাই যেন প্রয়োজনীয় শিক্ষাটা নেয়।