ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বিভাজন

দুই মাসের অধিক সময় সাধারণ ছুটি থাকার পর ৩১ মে থেকে সরকারি, বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। সীমিত পর্যায়ে গণপরিবহন চালু হয়েছে ১ জুন থেকে। সরকার বলেছে, জনস্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে অফিস ও যাতায়াত করতে হবে। কিন্তু অফিস কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আগে থেকে কোনো চিন্তাভাবনা ছিল বলে মনে হয় না। অফিস খোলার এক দিন পর ১ জুন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোতে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা–কর্মচারী কাজ করবেন। সেই ২৫ শতাংশের মধ্যে কারা থাকবেন, কারা থাকবেন না, সে বিষয়েও নীতিমালা তৈরি হয়নি। ফলে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। সরকারি অফিস খোলার আগে অনেক বেসরকারি ও জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ নীতিমালার ভিত্তিতে লোকবল ব্যবহার করে আসছে। সরকারি অফিসগুলোও সেই নীতি অনুসরণ করতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ও মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পুরো দেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হবে। অধিকতর আক্রান্ত অঞ্চল লাল, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত অঞ্চলকে হলুদ এবং অনাক্রান্ত বা একেবারে কম আক্রান্ত অঞ্চল হবে সবুজ। বৈঠকে উপস্থিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা তিন মহানগরীতে অন্তত ১৫ দিনের জন্য লকডাউন করার কথা বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে এখান থেকে কেউ বাইরে যেতে কিংবা বাইরে থেকে আসতে পারবেন না।

বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে আক্রান্তের মাত্রা অনুযায়ী অঞ্চল ভাগ করা হবে। এর আগেও অনেক স্থানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে করোনা সংক্রমণ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। একেবারে শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী তাঁর এলাকায় কারফিউ জারির জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তখন এসব আবেদন গ্রাহ্য করেনি। ভারত ও বাংলাদেশ প্রায় একই সময়ে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। ভারত সরকার গণপরিবহন চালু করলেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লকডাউন ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের ঝুঁকিটা বেশি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, অঞ্চল ভাগ মানে লাল, হলুদ, সবুজ সীমানা নির্ধারণ করে চুপচাপ বসে থাকা নয়। অঞ্চল ভাগ মানে অধিক আক্রান্ত অঞ্চলকে অন্যান্য এলাকা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা। গণপরিবহন বা অফিস খোলার আগে কাজটি সহজ ছিল, তবে এখনো অসম্ভব নয়। দিল্লিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহ দিল্লির সীমান্ত বন্ধ থাকবে। কেউ বাইরে থেকে আসতে পারবেন না, দিল্লি থেকেও কেউ যেতে পারবেন না। দিল্লি সরকার যদি এ রকম কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আমরা কেন পারব না?

একই সঙ্গে জনগণ যাতে অফিস, বাজার, পরিবহনসহ সর্বত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তির মাত্রা বাড়াতে হবে। একজনের অবহেলা বা অসতর্কতার কারণে ১০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেটি মেনে নেওয়া যায় না।

করোনাসংকট মোকাবিলায় ইতিপূর্বে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কাজেও সমন্বয় ছিল না। জাতীয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব আর চলতে দেওয়া যায় না। অতএব, অঞ্চল ভাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।