দুধের অভাবে বাঙালি

দুধে–ভাতে বাঙালি কথাটা প্রবাদেই আছে, বাস্তবে আর নেই। হয়তো কোনো সমৃদ্ধ অতীতে কৃষিজীবী সমাজের মানুষেরা এই প্রবাদের জন্ম দিয়েছিলেন, সেখান থেকে প্রেরণা নিয়েই কবি লিখেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে–ভাতে’। প্রবাদ আর কাব্যের মধ্যে লুকানো বৈজ্ঞানিক সত্যটা এখন জনস্বাস্থ্যের নাজুক কাঠামোয় আঘাত করছে।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুধপানের দারিদ্র্য অতীব করুণ। যতটা দরকার, তার তিন ভাগের এক ভাগ আমরা পান করি। এটা গড় হিসাব, বাস্তবে বিপুল অধিকাংশ মানুষ কালেভদ্রে দুধের দেখা পান। কিন্তু মানব শরীরে পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জোগানোয় দুধ খুবই সহায়ক। প্রতিকারহীন করোনাভাইরাসের মহামারির এই সময়ে দুধপানের গুরুত্ব নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলার দরকার হবে না। সোমবারের প্রথম আলোর সংবাদ ‘দুধ পানে পিছিয়ে বাংলাদেশ’ সমস্যাটার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে বলছে।

বাংলাদেশের মানুষের দুধে রুচি নেই—কথাটা মোটেই ঠিক নয়। বাংলাদেশে পানযোগ্য দুধের দাম অত্যধিক বেশি। এর অন্যতম প্রধান কারণ চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি। ঘাটতির কারণে দাম বেশি। এ রকম উচ্চ দামে নিয়মিতভাবে পরিবারের সবাই মিলে দুধ পান করা অধিকাংশ মানুষের জন্যই বিলাসিতা। অথচ এ রকম সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতার এ রকম গুরুত্বপূর্ণ উৎসকে হাতের নাগালে আনা কতই–না জরুরি ছিল।

যাঁরা দুধ পান করেন, বাজারে সমস্যা দেখা দিলেই তাঁদের অনেকেও দুধ কেনা বন্ধ করে দেন। করোনাজনিত লকডাউনে দুধ সরবরাহ একেবারেই থমকে গিয়েছিল। জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব খালি চোখে দেখা না গেলেও অর্থনৈতিক ক্ষতিটা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান। দুধ উৎপাদনে জড়িত লাখো খামারির আর্থিক লোকসান দুধ উৎপাদনে সক্ষমতার ওপর বিরাট ধাক্কা। বিক্রি না হওয়ায় অনেক খামারি দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হন।

সরকারের দেওয়া অর্থনৈতিক প্রণোদনার অন্যতম খাত ছিল বিভিন্ন ধরনের খামারিরাও। কার্যত তাঁরা এই সহায়তা পাচ্ছেন কি না, সেটা দেখা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব। না হলে দুগ্ধশিল্পের জরুরতটাও দুধে–ভাতে বাঙালির প্রবাদের মতোই অলীক হয়ে থাকবে। দুগ্ধশিল্প, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থে দ্রুতই দুগ্ধ উৎপাদন, সরবরাহ ও সহজলভ্য করার দরকার রয়েছে। দুধ যাতে ফ্রিজে না রেখেও অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা আছে। সুলভ মূল্যে এর প্রসার দুগ্ধজাত খাদ্যের বাজার ও ভোক্তা—সবার জন্যই ভালো ফল দেবে।