বাড়তি বিদ্যুৎ বিল

কোভিড–১৯ পরিস্থিতির মধ্যে অনেকের জন্য বাড়তি যন্ত্রণা হয়ে এসেছে বাড়তি বিদ্যুতের বিল। কারও কারও বেলায় ১০ থেকে ১২, এমনকি ১৬ গুণ বাড়তি টাকাও বিল করা হয়েছে। এমনিতে দুই থেকে তিন মাসের বকেয়া বিল একবারে পরিশোধ করা অনেকের জন্য এ আর্থিক দুরবস্থায় কঠিন হওয়ার কথা। আবার পরিশোধ না করলে সংযোগ কেটে দেওয়ার আশঙ্কা। ব্যক্তি ভুল করলে শাস্তি ও জরিমানা পান, কিন্তু সরকারি সংস্থা ভুল করলে সেই ভুলের প্রতিকার না করে আরও ভোগান্তিতে কেন ফেলা হবে, এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? আর কতভাবে মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলা হবে? 

বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে প্রথম আলোর গত শনিবারের সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে ধাপ না দেখে মোট বিদ্যুৎ খরচের ওপর ইউনিটের দাম ধরেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অনুমানভিত্তিক হিসাব। আরইবির ৮০টি সমিতি, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানিরই গ্রাহকদের একাংশ ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন। একজন গ্রাহক স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি বিলও পেয়েছেন। 

বিল খতিয়ে দেখা যায়, বিইআরসির বেঁধে দেওয়া নিয়ম লঙ্ঘন করে সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুতের দর বেশি করে ধরা হয়েছে। এমনটা করা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিইআরসির নিয়ম অনুযায়ী, মোট সাতটি ধাপে বিদ্যুতের দাম ধরতে হয়। যে গ্রাহক মাসে যত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাঁর বিলও তত কম হবে। মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিটের দর হবে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ব্যবহার ৬০০ ইউনিট ছাড়ালে প্রতি ইউনিটে দাম গুনতে হবে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা। অথচ ব্যতিক্রমী বিলগুলোর বেলায় এ নিয়ম মানা হয়নি।

বাড়তি বিলের বোঝা চাপানো হলেও ঝোড়ো মৌসুমে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারছে না ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। দেশের অন্যান্য জায়গার অবস্থাও তথৈবচ। গত ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহব্যবস্থা রয়ে গেছে মান্ধাতার আমলে। এমনকি অলস পড়ে থাকা অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ যোগ হয়ে বিদ্যুৎ খাতের অপচয়ও আকাশছোঁয়া হচ্ছে।

এদিকে একবার বিল দিয়ে দিলে বাড়তি টাকার সমন্বয় হওয়া সহজ নয়। জনগণ এ ভোগান্তির জরুরি সমাধান চায়।