'ভালোবাসার থলে'

পারস্পরিক স্পর্শ সংযোগ এড়ানোর প্রয়োজনে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ও তাঁর সার্বক্ষণিক স্পর্শসংযুক্ত লোকদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিভৃতি বজায় রাখতে হয়। যেহেতু আক্রান্ত হওয়া দোষ বা অপরাধ বা লজ্জার কিছু নয়, তাই এই নিভৃতি বা কোয়ারেন্টিনও অপরাধ বা লজ্জার বিষয় নয়।

অতি পরিতাপের বিষয়, এই সহজবোধ্য বিষয়টিই সমাজের বৃহত্তর গোষ্ঠীর কাছে দুর্বোধ্য হয়ে আছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কোনো বাড়ির কেউ আক্রান্ত হয়েছে শুনলে অতি আতঙ্কেই হোক কিংবা পরিবারটির প্রতি কোনো বিদ্বেষের কারণেই হোক তাঁদের ‘অচ্ছুত’ প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। পরিবারটি যদি হতদরিদ্র পর্যায়ের হয়, তাহলে তাদের কষ্টের সীমা থাকছে না। একদিকে উপার্জন বন্ধ থাকায় সদাইপাতির তালিকা সর্বোচ্চ মাত্রায় সংকুচিত হয়ে আছে, অন্যদিকে সবাই তাঁদের সংস্পর্শে আসতে ভয় পাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাপনও তাঁরা করতে পারছেন না। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এই অবস্থার শিকার হচ্ছে।

করোনা আক্রান্ত এসব পরিবারের পাশে বগুড়ার ধুনট উপজেলা প্রশাসন যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তাকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বললে অতিরঞ্জন হবে না। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উদ্যোগে কোভিড–১৯ আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে খাদ্যসহায়তা পাঠানো হচ্ছে। সাত দিনের খাদ্যসহায়তা হিসেবে ১০ কেজি করে চালের সঙ্গে ডাল, তেল, লবণ, আলুসহ নানা পদের সবজি বস্তায় ভর্তি করে পাঠানো হচ্ছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিরা এটিকে মামুলি ত্রাণসামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করেননি। ভালোবাসার অর্ঘ্যের মতোই তাঁরা এই উপহার গ্রহণ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা এর নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসার থলে’। বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিলে এই নাম যথার্থ ও সার্থক হয়েছে। কারণ, এই থলের ভেতরে থাকা খাদ্যসামগ্রী বা নিত্যব্যবহার্য পণ্যের সঙ্গে সহমর্মিতা ও বিপদে পাশে থাকার আশ্বাসের আবেগঘন যে দ্যোতনা আছে, তার ঔজ্জ্বল্যের কাছে তার বস্তুগত ও আর্থিক মূল্যমান একেবারেই ফিকে হয়ে গেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ধুনট উপজেলায় গত এক সপ্তাহে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ইউএনও রাজিয়া সুলতানা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে মনোবল চাঙা রাখতে বলছেন। পাশাপাশি পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে বলেও তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এ দুঃসময়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো সবার নৈতিক কর্তব্য।

গোটা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন এই নৈতিক কর্তব্যই অবশ্যপালনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।