ট্রাম্প নিজেই এখন দুর্ভোগ-দুর্যোগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

আমেরিকায় দুটি ভয়াবহ জাতীয় বিপর্যয় নেমে এসেছে। একটি কোভিড–১৯ এবং আরেকটি হলো শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার জের ধরে সৃষ্ট বর্ণবাদবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ। এই দুটি বিপর্যয় হোয়াইট হাউসের বিচক্ষণতার সঙ্গে সামাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে এমন একজন লোক বসে আছেন, যিনি নিজেই একজন ভারসাম্যহীন মানুষ এবং দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ অযোগ্য। তিনি খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত তাঁর হঠকারী নীতির কারণে এই দুটি বিপর্যয় এখন মহাবিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। 

ট্রাম্পের অক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমেরিকায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার লোক করোনাভাইরাসে মারা গেছেন এবং আরও বহু মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। যেসব অঙ্গরাজ্যে এই ভাইরাস এখনো আঘাত করেনি, সেখানেও তা ছড়িয়ে পড়ছে। এই স্বাস্থ্যসংকট আমেরিকার অর্থনীতিকে ১৯৩০ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের পর সবচেয়ে বড় সংকটে ফেলে দিয়েছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও নৈরাজ্য। 

মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় জর্জ ফ্লয়েডের নিহত হওয়ার দৃশ্য কোটি কোটি আমেরিকান দেখে ফেলেছে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিন নির্বিকারভাবে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু চেপে ধরে আছেন। তাঁর দুই সহকর্মী ফ্লয়েডের পিঠে বসেছিলেন। ফ্লয়েড বারবার বলছেন ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’। কেউ যাতে তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে না পারেন, সে জন্য চতুর্থ আরেকজন সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন। ৯ মিনিট পরই ফ্লয়েড চেতনা হারিয়ে ফেলেন। 

এই দৃশ্য গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের নৃশংসতা ও বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এই দৃশ্যই যথেষ্ট। এটি মানুষকে ক্ষুব্ধ করার জন্য যথেষ্ট। লাখ লাখ মানুষ যখন পুলিশের নৃশংসতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে, তখন ট্রাম্প তাদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা না করে নিক্সনের ‘আইন ও শাসন’ নীতির দিকে গেলেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের দমন করার হুমকি পর্যন্ত দিলেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখানো লাখ লাখ মানুষের দিকে না তাকিয়ে সহিংস অল্পসংখ্যক মানুষের আলোচনা সামনে আনার চেষ্টা করলেন এবং সমগ্র বিক্ষোভ কর্মসূচিকে একটি বেআইনি তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেন। 

তাঁর আচরণে তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জেমস ম্যাটিসসহ বহু রিপাবলিকান নেতা পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, রিপাবলিকান পার্টি সম্পর্কে ট্রাম্প এমন একটি নেতিবাচক ধারণা স্থায়ীভাবে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছেন, যা ভবিষ্যতে দলটিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। 

ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর পুলিশের হাঁটু চেপে ধরাকে তাবৎ কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘাড়ে আমেরিকান এস্টাবলিশমেন্টের হাঁটু চেপে ধরা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সাদা-কালোর বিভাজন আরও বেড়ে যাচ্ছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়ছে। আর এর সবকিছুই ট্রাম্পের হঠকারী নীতির কারণে হচ্ছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যদি ঐক্যের ডাক দিতেন এবং সবাইকে এক ছাতার তলায় আসার আহ্বান জানাতেন, তাহলে এই পরিস্থিতি এত দূর গড়াত না। 

স্বাস্থ্য থেকে অর্থনীতি, শিক্ষা থেকে কর্মসংস্থান—সব খাতে ধস নেমে এসেছে শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের গোঁয়ার্তুমির কারণে। এখনো করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ট্রাম্প প্রশাসনকে গঠনমূলক কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষা খাতও আগের চেয়ে নড়বড়ে হয়ে গেছে। 

বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকার যে ভূমিকা ছিল, এখন তা একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে বেকারত্বের হার কমার বদলে বেড়ে গেছে আতঙ্কজনকভাবে। সবখানেই বিপর্যয়কর অবস্থা নেমে আসছে। এ বিষয় অধিকাংশ আমেরিকান বুঝতে পারছেন। এটিই এখন ভরসার কথা। 

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
এলিজাবেথ ড্রু ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক