চিকিৎসাকর্মীদের জন্য হাসপাতাল

কোভিড–১৯ মহামারির শুরুর দিকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। ঢাকার মহাখালীতে ডিএনসিসি মার্কেটের ছয়তলায় এই অস্থায়ী হাসপাতালে ৫০টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ২৫০টি শয্যা থাকার কথা। মোট ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। হাসপাতালটির কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা সম্ভব হলে করোনা–আক্রান্ত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সুচিকিৎসা পেতেন। তাঁদের মৃত্যুর সংখ্যা হয়তোবা এত বেশি হতে পারত না। কিন্তু হাসপাতালটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। শেষ হতে আরও দুই মাস লেগে যেতে পারে।

ভবন যেখানে প্রস্তুত রয়েছে, সেখানে শুধু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা, স্থাপন করা ও লোকবল নিয়োগের কাজটি সমাধা করতে এত সময় লাগছে কেন? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযোগ, দাতাদের শর্তের কারণে তাঁরা চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, একটি প্রতিষ্ঠান ৬০ কোটি টাকায় সব সরঞ্জাম সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের শর্ত, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সব সরঞ্জাম কেনা চলবে না। আমরা তো মনে করি, যথার্থ শর্ত। কেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সব সরঞ্জাম কিনতে আগ্রহী? এর মধ্যে জানা গেল, স্বাস্থ্যসেবা খাতের কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার এই হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। হাসপাতাল প্রকল্পের পরিচালক স্বয়ং অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালীরা কেনাকাটায় বাধা দিচ্ছেন।

যখন মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রশ্ন, তখন হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে এই পরিস্থিতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কারা এই ‘প্রভাবশালী’? তাঁদের অন্যায় ‘প্রভাব’ কেন একটি জরুরি সরকারি উদ্যোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে আর সরকার কেনই–বা সেটা গ্রাহ্য করবে?

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে ৪৪ জন চিকিৎসক ও ৭ জন চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যু ঘটেছে। শুধু চিকিৎসকই আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজারের বেশি। আক্রান্তদের সবাই সুচিকিৎসা পাচ্ছেন, এ কথা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তাঁদের মৃত্যুর তালিকা আর লম্বা হতে দেওয়া চলবে না। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটির যাবতীয় কাজ শেষ করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। শুধু দাতাদের শর্তের কারণেই নয়, জাতির স্বার্থে ও নৈতিকতার তাগিদে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সব সরঞ্জাম কিনতে হবে। তথাকথিত ‘প্রভাবশালী’ মহল এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনিয়ম–দুর্নীতির হোতাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।