করোনা চিকিৎসকদের পিপিই

বাংলাদেশে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যসেবীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মারা যাওয়ার হার পৃথিবীর গড় হারের তুলনায় বেশি—এমন খবর সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে কোভিড–১৯ মহামারি মোকাবিলায় এই সম্মুখসারির দায়িত্বশীলদের মধ্যে বেশ ক্ষোভ রয়েছে।

কিন্তু কেন এমন ঘটেছে, কেন এখনো তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশিই রয়ে গেছে, কেন এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসকদের মৃত্যুর খবর আসছে—এ রকম প্রশ্ন যতটা গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়ার কথা, ততটা হচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোভিড–১৯ মহামারি মোকাবিলার প্রথম ও প্রধান শক্তি হচ্ছে সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে না পারলে সেই নিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে না।

চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণের উচ্চ হারের প্রধান কারণ তাঁদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার ঘাটতি। করোনাভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে হলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মানসম্পন্ন পিপিই ব্যবহার করতে হবে, এর কোনো বিকল্পই নেই। এটা চিকিৎসকেরাই সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন; সে জন্য তাঁরা একদম শুরু থেকেই পিপিই সরবরাহ করার দাবি জানিয়ে এসেছেন। এমনকি একপর্যায়ে এমন কথাও তাঁরা বলতে বাধ্য হয়েছেন যে পিপিই না পেলে তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তখন তাঁদের প্রতি সরকার রুষ্ট হয়েছিল, গুণগত মানসম্পন্ন পিপিই পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরবরাহ করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে মে মাস পর্যন্ত ২৪ শতাংশ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী কোনো পিপিই পাননি।

এই হিসাব পাওয়া গেল ‘হেলথ ওয়াচ’ নামের একটি নাগরিক সংগঠনের ছোট আকারের একটি গবেষণা জরিপ থেকে। মে মাসে তারা চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ ও প্যারামেডিকস মিলিয়ে মোট ৬০ জনের ওপর টেলিফোনে জরিপ চালিয়ে পরিসংখ্যানটি তৈরি করেছে। যদিও সমগ্র চিত্র সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার জন্য এই তথ্য যথেষ্ট নয়, তবু এ থেকেই মোটামুটি ধারণা করা চলে, চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবীদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়া ও মারা যাওয়ার হার এত বেশি কেন। ইতিমধ্যে ৪৫ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন; এক হাজারের বেশি চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ জন। এসব সংক্রমণ ও মৃত্যু অনিবার্য ছিল না। 

চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের গুণগত মানসম্পন্ন পিপিই পর্যাপ্ত সংখ্যায় যথাসময়ে সরবরাহ করায় ব্যর্থতার দায় কার? তাদের জবাবদিহির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।