ঢাকার জলাবদ্ধতা

রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা কমানোর উদ্দেশ্যে গত চার বছরে খরচ করা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। কিন্তু তার ফল কী? সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকার অনেক এলাকায় আগের মতো আর জলাবদ্ধতা দেখা দেবে না—এই নিশ্চয়তা কি সৃষ্টি হয়েছে? মোটেও নয়। তার কিছুটা আভাস মিলেছে গত মাসের ২৪ ও ২৫ তারিখ এবং এ মাসের ২ তারিখে বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতার দৃশ্য থেকে।
২৪ মে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার, পরদিন মাত্র ২০ মিলিমিটার। তাতেই ঢাকার অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। আর ২ জুন ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই পুরান ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল রাজধানীর অন্তত ২০টি এলাকায়। কোথাও কোথাও হাঁটুসমান পানি জমেছিল৷ অনেক বাসাবাড়ির নিচতলায়ও হাঁটুপানি জমে গিয়েছিল। আর লক্ষণীয় বিষয় হলো, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা ছিল অনেক এলাকায়।
এসবের অর্থ হলো, বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য তৈরি নালা-নর্দমাগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। অথচ নর্দমা পরিষ্কার করার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে ঢাকা ওয়াসার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এ বাবদ চলতি বছরের পাঁচ মাসেই ওয়াসা তিন দফায় তুলে নিয়েছে ২০ কোটি টাকা! প্রশ্ন হচ্ছে, এত টাকা গেল কোথায়? নর্দমাগুলো পরিষ্কারের কাজে? সামান্য বৃষ্টিতেই কেন জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে? বাস্তবতা হলো, সারা বছর নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না, শুধু বৃষ্টি হলেই ওয়াসা নড়েচড়ে ওঠে। নর্দমার আবর্জনা তুলে স্তূপ করে রাখা হয় রাস্তার ওপরেই কিংবা পাশে, এমনকি অনেক ম্যানহোলের ঢাকনাও আর বন্ধ করা হয় না। ফলে আবার বৃষ্টি হলে সেসব আবর্জনা আবারও গিয়ে পড়ে সেই নর্দমায়। এমনই দায়সারাভাবে নর্দমা পরিষ্কার করার নামে কোটি কোটি টাকা জলে ফেলা হয়। আর কত কোটি টাকা যে চুরি করা হয়, কে জানে।
বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই নর্দমাগুলো পরিষ্কার করা জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি এই কাজের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও সর্বোপরি ঢাকা ওয়াসার জবাবদিহি নিশ্চিত করা।