অক্সিজেন ব্যাংক

একজন সুস্থ মানুষ সারা জীবন মুক্ত বাতাস থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন টেনে নেয়, তার আর্থিক মূল্য কত? এই প্রশ্ন আপেক্ষিক, ক্ষেত্রবিশেষে অবান্তর। উত্তর তথৈবচ। কারণ, মুক্ত বাতাসের সুলভ অক্সিজেনের দরদাম নির্ধারণের মাপকাঠি কারও হাতে নেই। কিন্তু সেই অক্সিজেন যখন সিলিন্ডারবন্দী হয়, তখন তার আর্থিক মূল্য ধরা হয়। রোগীর যদি শ্বাসকষ্ট ওঠে এবং সেই সিলিন্ডারের যদি আকাল পড়ে, তখন তার সেই নির্ধারিত দাম আর নির্ধারিত জায়গায় থাকে না। দাম আকাশ ছুঁতে থাকে।

অতি সম্প্রতি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন রোগীকে ৩০ মিনিট অক্সিজেন দেওয়ার পর ওই রোগীর স্বজনদের হাতে ৮৬ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দেশে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, তখন এ ঘটনা দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে কী ধারণা দেয়, তা ব্যাখ্যার অতীত।

 এ অবস্থার মধ্যে কিছু হৃদয়বান মানুষ সিলিন্ডারের অক্সিজেনকে সহজলভ্য ও ক্ষেত্রবিশেষে বিনা মূল্যের সেবা হিসেবে নিয়ে এসেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘অক্সিজেন ব্যাংক’। সেখানে ফোন করার পর রোগীর বাড়িতে চলে আসে অক্সিজেন। প্রতিদিন বহু পরিবারের অক্সিজেন সিলিন্ডারের দুশ্চিন্তা দূর করছে এ অক্সিজেন ব্যাংক।

করোনার সময়ে অক্সিজেন-সংকটে ভুগতে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াতে এ ব্যতিক্রমী ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পে ইট ফরোয়ার্ড, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও নেসার ফাউন্ডেশন। চট্টগ্রামে শুরু হওয়া এ উদ্যোগ এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা।

চট্টগ্রামের আলোচিত অজ্ঞাতনামা রোগীদের বন্ধুখ্যাত সাইফুল ইসলাম নেসার একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে এ যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে এ উদ্যোগে শামিল হয় পে ইট ফরোয়ার্ড ও মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। সহায়তা দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ২৫টি রোটারি ক্লাব। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন পে ইট ফরোয়ার্ডের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য কোনো ফি নেওয়া না হলেও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় ব্যবহারকারীকে। পরে তা ফেরত দেওয়া হয়। অবশ্য কেউ জমা দিতে না পারলে পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনা জামানতেও সিলিন্ডার দেবেন তাঁরা।

করোনা মহামারির মতো দুর্যোগের মধ্যে চালু হওয়া এ মহান উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা যুক্ত হলে তা আরও বেগবান হতে পারে।