স্বাস্থ্যবিধি মানায় শিশুরা এগিয়ে

করোনা সংক্রমণ রোধে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী হাত ধোয়াসহ পরিচ্ছন্নতাবিধি মেনে চলছে বলে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের জরিপে বেরিয়ে এসেছে। যেখানে অনেক বয়স্ক ব্যক্তি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলেছেন, সেখানে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যবিধি মানার এ প্রবণতা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।

ব্র্যাক পরিচালিত জরিপে আরও বলা হয়, ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী লকডাউন বা ছুটির মধ্যেও বাইরে চলাফেরা করছে; ৮২ শতাংশ ঘরে থাকছে। আর মহামারির এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কে ভুগছে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলায় গত ৪ থেকে ৭ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৯৩৮ শিক্ষার্থীর ওপর এ জরিপ চালানো হয়। 

৯০ শতাংশ শিশু-কিশোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অর্থ এখনো ১০ শতাংশ মানছে না। আমরা চাই শতভাগ শিশু-কিশোর এটি মেনে চলুক। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব প্রধান হলেও শিক্ষকেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁরা মুঠোফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। অনেক স্থানে এটি বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছেও। এ তথ্য বিশ্লেষণ করলে যে সত্য বেরিয়ে আসে তা হলো শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন নয়। বড়দের দেখেই শিশুরা শেখে। যদি বড়রা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, তাঁদের দেখাদেখি শিশু-কিশোরেরাও শিখবে। অতএব, শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হলে অভিভাবকদের আগে তা মেনে চলতে হবে।

তবে জরিপে ১৮ শতাংশ শিশু-কিশোরের বাইরে যাওয়া এবং ১৬ শতাংশের আতঙ্কে থাকার খবরটি উদ্বেগজনক বটে। করোনাকালে শিশু–কিশোরেরা যাতে ঘরের বাইরে না যায় এবং তারা যাতে কোনো ধরনের আতঙ্কের মধ্যে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে অভিভাবকদেরই। যেসব অভিভাবক এত দিন এসব সমস্যাকে গুরুত্ব দেননি বা সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি, তঁারা এ ব্যাপারে সচেতন হবেন, সেটা প্রত্যাশিত। শিশু-কিশোরদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হলে তা মনোজগতের ওপর যে প্রভাব ফলে, তা তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। 

শিশু-কিশোরেরা বাইরে যেতে চাইবে, এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতি ও বাইরে যাওয়ার বিপদ সম্পর্কে তাদের বোঝাতে হবে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের দায়িত্ব ঘরে তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া এবং আনন্দঘন পরিবেশে পড়াশোনা, গল্পগুজব ও ঘরোয়া খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দময় পরিবেশ গড়ে তোলা। 

করোনা সংকটের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটির এ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কি না, সেটি নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির ওপর। অভিভাবকদের সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।