ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা আক্রান্ত

করোনা সংক্রমণের কারণে অন্যান্য এলাকার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষও খুব দুরবস্থায় আছেন। অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন। এই সুযোগে জালিয়াত চক্র তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে হামলার প্রতিবাদে টংপাড়ার কাছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাচোল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের ফুলকুঁড়ি মোড়ে গত বৃহস্পতিবার বঙ্গপাল নামে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এক নেতার ওপর হামলা করে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হামলার খবর শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে নাচোল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেছেন, অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যে ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটেছে, তিনি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, সেখানে অভিযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কেন? হামলার শিকার বঙ্গপাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তিনি সুস্থ হওয়ার আগে সন্ত্রাসীরা যে আবার সেখানে হামলা চালাবে না, তার নিশ্চয়তা কী? এর আগেও ভাড়াটে লোক দিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার মানুষেরা থানায় নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।

 হামলার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের টংপাড়ার যে খাসজমিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন শত শত বছর ধরে বাস করে আসছেন, সেই জমির ওপর নজর পড়েছে এলাকার জালিয়াত চক্রের, যার নেপথ্যে আছেন একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তাঁরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনকে উচ্ছেদ করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করার পাশাপাশি ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালিয়েছেন। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে সংগঠিত করার কারণেই বঙ্গপাল জিঘাংসার শিকার হয়েছেন।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে এই নাচোলেই ইলা মিত্রের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল কৃষক বিদ্রোহ। নাচোল বা দেশের যেকোনো স্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর হামলা হলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা খাসজমিতে বসবাস করছে কি না, তা দেখার দায়িত্বও প্রশাসনের। এখানে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। দুর্ভাগ্যজনক যে অনেক স্থানে প্রশাসনের সহায়তায় জালিয়াত চক্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনকে উচ্ছেদ করে। নাচোলে যেন তা না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সেখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতার ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।