সন্দ্বীপের তিন তরুণ

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তিন যুবকের ইচ্ছা ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। সময় কাটানোর ফেসবুককে তাঁরা ব্যবহার করেছেন উপায় হিসেবে। সন্দ্বীপের তিন যুবকের কাহিনিতে অপহরণের শিকার শিশুকে উদ্ধারের রোমাঞ্চকর গল্প যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুই হাত হারানো এতিম তরুণের চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের মানবিক নজির। করোনার সময়ে তাঁরা পাশে পেয়েছেন আরও অনেককে। ফেসবুক ব্যবহার করে সংগৃহীত ১৭ টন খাদ্যসামগ্রী ও অর্থ তুলে দিয়েছেন ৮০০ পরিবারের হাতে।

২০১১ সালে জনসেবা শুরু করা তরুণেরা এখন রীতিমতো যুবক। নিজেদের ব্যবসা সামলাতে হয়, পরিবার চালাতে হয়। কিন্তু সেই যে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়! অবসরে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যেন তাঁদের নেশা। কিছু কিছু রাজনীতিক যখন এক মগ চাল দিতে আটজন মিলে ছবি তোলেন, দুস্থ হয়ে পড়া মানুষকে সাহায্যের নামে আত্মপ্রচারে নামেন, সাহায্যগ্রহীতাদের ছবি তুলে তাঁদের বিব্রত করেন; তখন সন্দ্বীপের এই তরুণেরা কাজ করে গেছেন নীরবে।

শুধু তাঁরাই নন, সারা দেশেই এ রকম অজস্র ছোট-বড় গ্রুপ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ত্রাণের মধ্যে যে দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক তৈরি হয়, সেটা এড়াতে তাঁরা ভূমিকা নিয়েছেন পাশে দাঁড়ানোর। এটাই সমাজ ও সামাজিকতা। এটাই মানুষ ও মানবিকতা। এই করোনা মহামারির সময়ে মানুষের ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকাই যখন কঠিন, তখন এই তরুণেরা হয়েছেন ভালোবাসার ইঞ্জিন; অজস্র মানুষকে দুর্যোগের ভেতর দিয়ে তাঁরাই টেনে নিয়ে চলেছেন।

আমাদের মতো দেশে যেখানে রাষ্ট্রের সামর্থ্য কম, সেই সীমিত সামর্থ্যও দুর্নীতি ও অপচয়ে নষ্ট হয়, জনপ্রতিনিধিদের অনেকের দুর্নীতির নিষ্ঠুরতার খবর ভরসা নষ্ট করে দেয়, তখন দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়ে। জনগণকেই জনগণের দায়িত্ব নিতে হয়। এ রকম সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাউকে তো লাগবে। সামাজিক সহায়তার ঐতিহ্যও আমাদের অনেক পুরোনো।

রাষ্ট্র যেখানে উদাসীন বা ব্যর্থতা যেখানে প্রবল, সেখানে সমাজকে হতে হয় বিপদের রক্ষাকবচ। সন্দ্বীপের তরুণেরা সেই হারানো মানবিকতারই প্রহরী। তাঁরা দেখিয়েছেন, উদ্যোগ নিলে আরও অনেকেই এগিয়ে আসেন। এই সমন্বয়ের কাজ যদি প্রতিটি থানা ও ইউনিয়নের তরুণেরা করতেন, তাহলে করোনার বিপর্যয় কিছুটা হলেও সহনীয় হতো। ভবিষ্যতে দীর্ঘ সময় কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে মানুষকে। তরুণেরা জেগে না উঠলে সেই পথ অন্ধকারময় হয়েই থাকবে।