হোলি আর্টিজানের স্মৃতি

১ জুলাই বাংলাদেশে এক ভয়ংকর রাতের স্মৃতি নিয়ে ফিরে ফিরে আসে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে ২ জুলাই ভোর পর্যন্ত ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারি নামের এক রেস্টুরেন্টে উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীরা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা মোট যে ২২ জনকে হত্যা করেছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ জন ভারতীয় ও ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁদের অন্যতম ছিলেন সাহসী তরুণ ফারাজ আইয়াজ হোসেন; জঙ্গিরা তাঁকে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু তিনি দুই বন্ধুকে ছেড়ে আসতে চাননি। জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে দুজন পুলিশ সদস্যও সেদিন নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই রেস্টুরেন্টের দুই কর্মী।

আমরা হোলি আর্টিজানের শোকাবহ স্মৃতির এই দিনে নিহত সবার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। 

স্বস্তির বিষয়, হোলি আর্টিজান মামলার বিচার বিচারিক আদালতে সম্পন্ন হয়েছে; গত বছর আদালতের ঘোষিত রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১ জনের খালাস আদেশ হয়। উল্লেখ্য, হামলাকারীদের মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মারা যায়। জীবিত আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ জনই কারাগারে আছে। মামলাটি এখন হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। 

২০১৬ সালের আগে ও পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ইসলামিক স্টেট অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানের হামলার ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ বলেছিল, হামলাকারীরা ছিল স্থানীয় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী নব্য জেএমবি। তবে হামলাকারীরা স্বয়ং ওই রেস্টুরেন্টের ভেতরে হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচার করেছিল যে তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য। আইএস সিরিয়া-ইরাকের একটি বড় অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করেছিল। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল, এ দেশ থেকেও কিছু তরুণ-যুবক তাদের সঙ্গে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিলেন, এমন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। 

হোলি আর্টিজান হামলার পর বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে আগের চেয়ে অনেক তৎপর হয়ে ওঠে এবং ক্রমান্বয়ে তাদের প্রকাশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে সক্ষম হয়। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, গোপনে তারা স্বল্প সংখ্যায় হলেও সক্রিয় রয়েছে। কোভিড মহামারির প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে এবং বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে গেলে তরুণ-যুবকদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে—বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা।

হোলি আর্টিজানের আসামিদের বিচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এবং আইনানুগ দণ্ড কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক।