তুঘলকি আদেশ

নদীপথে পণ্য পরিবহন নতুন সমস্যার মুখে পড়েছে। এর কারণ, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের একটি বিবেচনাহীন আদেশ। ওই আদেশে বেসরকারি জাহাজমালিকদের সংগঠন ডব্লিউটিসিকে নদীপথে জাহাজে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন ডব্লিউটিসির সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অনুমতি নেই বলে জাহাজ আটকে দিচ্ছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। শিল্পের কাঁচামাল, আমদানি-রপ্তানি পণ্য এবং বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী জায়গায় জায়গায় আটকে থাকছে—ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির। ডব্লিউটিসি নামের একটি বেসরকারি সংগঠন, যা মূলত বেসরকারি জাহাজমালিকদের একটি সমিতি মাত্র, তার হাতে পণ্য চলাচলের অনুমতি বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া শুধু বিস্ময়করই নয়, এটা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ও। কেননা, ডব্লিউটিসি নিজেরাই জাহাজ ভাড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন করে থাকে। আপন ব্যবসায়িক স্বার্থেও তারা তাদের বাইরের পণ্য পরিবহনকারী জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কাজ হলো সবার স্বার্থে নৌচলাচলকে সুগম করা। সেখানে কিসের ভিত্তিতে তাঁরা এমন তুঘলকি আদেশ দিলেন, তা বোধগম্য নয়।

ডব্লিউটিসিকে যে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, তা সরকারি ক্ষমতার সমান। অথচ ডব্লিউটিসি নিজেরাও নৌপরিবহন–বাণিজ্যের একটি জোট। তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। ডব্লিউটিসির ১ হাজার ২০০টি জাহাজের বাইরেও বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের নিজস্ব মালিকানাধীন এবং ভাড়ায় চালানো জাহাজের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। নৌপরিবহন অধিদপ্তর কি এভাবে একটি পক্ষকে নৌপরিবহনের অনুমতিদানের ক্ষমতা দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ল না?

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অবশ্য প্রথম আলোর কাছে জানিয়েছেন, নৌপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যত শৃঙ্খলার নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টার ফল হলো এ আদেশ। সমুদ্রপথে আমদানি পণ্যের ৯৩ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা হয়। বন্দরে বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে করে পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, এ খাতে ডব্লিউটিসির একক নিয়ন্ত্রণের ব্যবসায়িক ইচ্ছাতেই শৃঙ্খলার নামে খবরদারির সুযোগ আনা হয়েছে। অধিদপ্তর অবশ্য বলেছে, আদেশটি সংশোধন করা হবে। ভুল আদেশের দায় স্বীকার আগে করা দরকার। তারপর এমনভাবে নৌপরিবহন ব্যবস্থা সাজানো দরকার, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পোৎপাদন সহজ হয়। এ ধরনের খামখেয়াল মোটেই ভালো কোনো ব্যাপার নয়।