ইন্টারনেট-সেবার খরচ

সদ্য পাস হওয়া জাতীয় বাজেটে ভ্যালু চেইন সার্ভিসগুলোর ব্যবসায় ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের ফলে দেশে ভোক্তাপর্যায়ে ইন্টারনেট–সেবার খরচ বেড়ে যাবে। এটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পক্ষে সহায়ক হবে না। গত শনিবার ইন্টারনেট–সেবা প্রদানকারীদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (ইসপাব) এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলে, চলতি অর্থবছরে ভ্যালু চেইন সার্ভিসগুলোর ব্যবসায় সরকারের আরোপিত বাড়তি ভ্যাটের আওতায় পড়েছে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্‌ল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন্স ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন)। ফলে ইন্টারনেট–সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি ভ্যাটের চাপ পড়বে। আর এটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেই বোধগম্য যে তারা সেই চাপে পড়ে ভোক্তাপর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগের মূল্য বাড়ি দেবে।

এমন এক সময়ে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হলো, যখন করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, দাপ্তরিক কাজকর্ম, ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্র ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি আরও কত দীর্ঘায়িত হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে এই দুঃসময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব তেমন কমবে না। বরং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যে ধারা ইতিমধ্যে সূচিত হয়েছে, তার প্রযুক্তিগত অবকাঠামো যেহেতু ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগমাধ্যম, তাই ইন্টারনেটের ব্যবহার আগামী দিনগুলোতে বাড়তেই থাকবে। ফলে যত দ্রুত যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ইন্টারনেট–সেবা পৌঁছানো যাবে, সামগ্রিক উন্নয়ন তত বেগবান হবে। সে জন্য এর খরচ সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে যাওয়া একটা বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত।

ইসপাব সরকারকে নতুন আরোপিত ভ্যাটের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসপাবের ইন্টারনেট পরিষেবায় ভ্যাট নির্ধারণ করা হোক ৫ শতাংশ হারে। ইসপাবের সভাপতি বলেছেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, এই ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হলে চলমান মহামারির মধ্যেই ভোক্তাপর্যায়ে ইন্টারনেট পরিষেবার মাসিক মূল্য ৩৫-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।’ তিনি এমন কথাও বলেছেন যে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাঁরা চলতি মাসেই প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন।

আমাদের মনে হয়, জাতীয় বাজেট প্রণয়নের সময় ইন্টারনেট পরিষেবার গুরুত্বের বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত ছিল। এই একুশ শতকে ইন্টারনেট–সেবা কোনো বিলাসী ব্যাপার নয়, বরং অপরিহার্য এক প্রযুক্তিগত সুবিধা, যার ওপর জাতীয় অর্থনীতিসহ সামগ্রিক জীবন ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ইন্টারনেট–সেবার অপরিহার্যতা এই করোনা মহামারিকালে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তো বটেই, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।

নতুন যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপযোগী প্রযুক্তি হিসেবে ইন্টারনেট আমাদের সরকারগুলোর কাছে বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। সেই গুরুত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। ইন্টারনেট–সেবা প্রদানকারীদের দাবি অনুযায়ী, আরোপিত ভ্যাটের হার অবশ্যই কমানো উচিত। নইলে তাঁরা ভোক্তাপর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগের দাম বাড়িয়ে দেবেন, আর সরকার তাতে বাধা দিলে তাঁরা কমিয়ে দেবেন সেবার মান, অর্থাৎ ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে তাঁরা তাঁদের বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ দুইয়ের কোনোটাই ভোক্তাদের স্বার্থের অনুকূলে যাবে না, এবং চূড়ান্ত বিচারে তা জাতির জন্যই ক্ষতিকর হবে।

সুতরাং ইন্টারনেট–সেবা প্রদানকারীদের আবেদন সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ইন্টারনেট পরিষেবায় সৃষ্ট জটিলতা দূর করতে নতুন আরোপিত ভ্যাটের হার কমানো হোক।