আম্পানে ভাঙা বাঁধ

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় ভাঙা বাঁধ মেরামত নিয়ে অনেক কথা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও তৎপরতা দেখিয়েছেন। কিন্তু কার্যত ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত হানার ৪০ দিন গত হলেও ভাঙা বাঁধগুলো এখনো মেরামত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে কোনোভাবে যেটুকু ঠেকা দেওয়া হয়েছে, বেশির ভাগই করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। আম্পান চলে গেলেও মানুষের দুর্ভোগের প্রতিকার এখনো হয়নি। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এমন দুর্যোগ, যার জন্য আগাম প্রস্তুতি থাকতে হয়। ঝড়ের মোকাবিলা গল্পের বুড়ির প্রতিশ্রুতির মতো না হয়ে, সময় থাকতে তা করাই ভালো। 

আম্পানে উপকূল রক্ষা বাঁধ অনেক জায়গায় ভেঙে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষ একটা কথাই বলেছেন, ‘ত্রাণ চাই না, বাঁধ ঠিক করে দাও’। গত ঈদের দিনেও গ্রামবাসী দল বেঁধে বাঁধে মাটি ফেলে বসতি ও জমি বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। উপকূলীয় মানুষের সেই ভোগান্তিরও শেষ নেই, বাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছাসেবী কাজেরও কোনো বিকল্প দেখা যায়নি। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলার সমুদ্রমুখী বসতিগুলো এখনো তাই ঝুঁকির মধ্যে। 

প্রথম আলোর ৭ জুলাইয়ের এক খবরে দেখা যাচ্ছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙা বাঁধ গ্রামবাসী স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে নিয়মিতভাবে মাটি ফেলে মেরামত করে নিয়েছেন। খুলনার কয়রায়ও একইভাবে গ্রামবাসীর এজমালি চেষ্টায় বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। যদি গ্রামবাসীকেই তাঁদের রক্ষার বাঁধ নিজেদের ঠিক রাখতে হয়, তাহলে জনদাবি মেনে বাঁধের ব্যবস্থাপনার কেন্দ্র বাঁধবর্তী মানুষকেই দেওয়া হোক। কেননা, ঐতিহাসিক ও বাস্তবিকভাবেই প্রমাণিত হয়েছে, দেশের কিছু এলাকায় পাইলট প্রজেক্ট করেও দেখা গেছে, ভুক্তভোগীরাই উপকূলীয় বাঁধের ভালো হেফাজতকারী। 

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পাউবোর আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ, তাদের একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ রাখা ঠিকাদার এবং ঘেরমালিকেরা। ঘেরে মাছ চাষের জন্য বাঁধে ফুটো করে লোনা পানি ঢোকানোয় ঘেরব্যবসা চাঙা হলেও, বাঁধের তাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। মুষ্টিমেয় পরিবারের স্বার্থের কাছে এভাবে কোটি কৃষকের স্বার্থ জিম্মি থাকতে পারে না। বারবার যঁাদের বাঁধের সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে, সেই স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় সমাজকে বাঁধের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া উপকূলীয় সুরক্ষার মূল চাবিকাঠি। সরকার জেনেশুনেও কায়েমি স্বার্থের কারণে, স্বেচ্ছাসেবী জনগণকে সরকারি কাজের অংশীদার না করা দুঃখজনক।