সংঘাতের দিকে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

দক্ষিণ চীন সাগরের মার্কিন নৌবাহিনী বিমানবাহী দুটি রণতরি মোতায়েন করেছে। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ চীন সাগরের মার্কিন নৌবাহিনী বিমানবাহী দুটি রণতরি মোতায়েন করেছে। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুগপৎভাবে সামরিক মহড়া দেওয়া শুরু করেছে। দুই পক্ষই বিশাল বিশাল নৌযান ও বিমান এ মহড়ায় ব্যবহার করছে। দুই পরাশক্তির এ শক্তি প্রদর্শন গোটা অঞ্চলে একটি উত্তেজনাকর লড়াইয়ের আবহ তৈরি করেছে। ৪ জুলাই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র যে মহড়ার আয়োজন করেছে, সেখানে মার্কিন নৌবাহিনী বিমানবাহী দুটি রণতরি ‘ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান’ ও ‘ইউএসএস নিমিৎজ’ মোতায়েন করেছে।

পেন্টাগন বলেছে, ২০১৪ সালের পর এই প্রথম এ দুটি রণতরি একসঙ্গে ভাসিয়ে মহড়া দিচ্ছে তারা। ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত ও অবাধ রাখার জন্য’ এ মহড়া দেওয়া হচ্ছে বলে পেন্টাগন ঘোষণা করেছে। মার্কিন নৌবাহিনীর সপ্তম নৌবহরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুটি রণতরিতেই অবস্থানরত সেনারা ওই এলাকার অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সেখানে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন।

ঠিক একই ধরনের ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধজাহাজ নিয়ে সেখানে মহড়া শুরু করেছে চীন। তাদের ০৫২ ডি মডেলের যুদ্ধজাহাজ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা বহন করছে। এ ছাড়া ০৫৪ এ মডেলের রণতরি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র বহন করছে। দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর ও পীত সাগরে এই রণতরিগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ‘এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার কিলার’ নামের ডিএফ-২১ডি এবং ডিএফ-২৬ মডেলের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র (যা রণতরি ধ্বংস করতে সক্ষম) পরীক্ষা করেছে। চীনের উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো হামলাকে এ ক্ষেপণাস্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

চীন বরাবরের মতোই বলেছে, তারা তাদের নিয়মিত মহড়ার অংশ হিসেবে এ মহড়া দিচ্ছে। নিজের জলসীমার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে তারা এটি করছে এবং এর সঙ্গে বাইরের কোনো দেশকে লক্ষ্য করে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে না। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের মহড়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, লাখো মাইল দূরের দেশ থেকে আসা সামরিক শক্তির মহড়া দক্ষিণ চীন সাগরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে চীনের সরকারি মুখপত্র হিসেবে পরিচিত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস তাদের টুইটারে বলেছে, ‘দক্ষিণ চীন সাগর পিএলএর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। এ অঞ্চলে যেকোনো মার্কিন বিমানবাহী রণতরির চলাচলে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই।’ তবে চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ সোং ঝংপিং বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে মাত্র দুটি রণতরি এনে যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে যে উসকানি দিচ্ছে, তা বাস্তবতাবিবর্জিত। এতে দুর্ঘটনাবশত উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত বেধে যেতে পারে। তিনি বলেছেন, পিএলএ মার্কিন মহড়ার ওপর পুরোপুরি নজরদারি করতে সক্ষম এবং চীনের নৌবাহিনীর যে ক্ষমতা আছে, তাতে তারা চাইলে এখান থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে দিতে পারে।

পেন্টাগন চীনের মহড়াকে উসকানি এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে। মার্কিন সপ্তম নৌবহর বিবৃতিতে বলেছে, তারা সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রযুক্তি নিয়ে এ মহড়া চালাচ্ছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক নৌ আইন অনুযায়ী দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় যাতে সব দেশের আকাশযান ও নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ।

ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ৫-এর অধিনায়ক রিয়ার অ্যাডমিরাল জর্জ উইকোফ বলেছেন, তাঁদের এ মহড়াকে চীনের সামরিক মহড়ার পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। তিনিও দাবি করেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত সামরিক মহড়ারই অংশ। তবে এসব কূটনৈতিক ভাষ্যের বাইরের সত্য হলো দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রশি টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।

যতই দিন যাচ্ছে, ততই দক্ষিণ চীন সাগরে চীন তার শক্তি বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও তার তৎপরতা বাড়িয়ে চলেছে। উভয় পক্ষ যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং সামরিক মহড়া অব্যাহত রাখে, তাহলে যেকোনো সময় সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

রিচার্ড জেভেড হিডারিয়ান এশিয়ার ভূরাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেঙচি ইউনিভার্সিটির একজন রিসার্চ ফেলো