পাহাড়ে ৬ খুনের ঘটনা

অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের উদ্দেশ্যেই ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সই করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এখনো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। স্বাভাবিকভাবে আশা করা গিয়েছিল যে সেখানে হানাহানি বন্ধ হবে এবং মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাহানি বন্ধ হয়নি। একের পর এক হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বান্দরবান সদর উপজেলার বাঘমারা রাজারপাড়ায় জনসংহতি সমিতির (জেএসএস-এম এন লারমা) ছয়জন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

যে কায়দায় মাত্র ১০ মিনিটে সংগঠনের একজন নেতার বাড়িতে ঢুকে তাঁকেসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হলো তাতে ধারণা করা যায়, খুনিরা পাকা শিকারি। জেএসএস-এম এন লারমা গ্রুপ হত্যার জন্য জেএসএসের মূলধারা অর্থাৎ সন্তু লারমা গ্রুপকে দায়ী করেছে। যদিও সন্তু লারমা গ্রুপ দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা হত্যার রাজনীতি করে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ হত্যার মূলে আছে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার।

উদ্বেগের বিষয় হলো বান্দরবানে এটি বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড নয়। এর আগে গত এক বছরে জেএসএসের (সন্তু লারমা) তিনজন, আওয়ামী লীগের পাঁচজন, মগ পার্টি থেকে জেএসএস-এম এন লারমা গ্রুপে যোগদানকারী একজন ও একজন সাধারণ নাগরিক খুন হন সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব ঘটনায় যে সংগঠনের নেতা বা কর্মী খুন হন, সেই সংগঠন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ী করে থাকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন জানেই পার্বত্য এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির কারণে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে, সেটি বন্ধ করতে তারা টেকসই পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। এ কঠোর নজরদারির মধ্যেও সন্ত্রাসীরা খুন করে পালিয়ে যায় কীভাবে?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অঘটনের পেছনে না ছুটে অঘটন যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় মানুষের মধ্যে যে ধারণা আছে, এর পেছনে গোষ্ঠী বিশেষের হাত আছে, সেটাই সত্য বলে প্রতীয়মান হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে কোনোভাবেই চুক্তির আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। সেখানে খুনোখুনি বন্ধ করতেই হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সব অঘটন ও গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের মূলে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া। তাই সরকারকে সমস্যার রাজনৈতিক দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে।