কঠিন বিপদে আল্লাহর কাছে দোয়া

করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ এখন এক কঠিন সময় পার করছে। এই কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই কোনো কঠিন সমস্যা বা বিপদের সম্মুখীন হতেন, তখনই আল্লাহর কাছে একান্তভাবে প্রার্থনা করতেন। বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এমন অনেক দোয়া পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দোয়াগুলো ছোট, সহজে মুখস্থও করা যায়। দেহ সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য যেমন খাবার বা আহারের প্রয়োজন, তেমনি কলব বা রুহকে জীবিত রাখার জন্যও খাবারের প্রয়োজন হয়। আর রুহ বা কলবের সেই খাবার হলো আল্লাহর জিকির করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হোয়ো না।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যহ সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম। অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (আবু দাউদ ও নাসাই)

হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে যেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা দোয়া পাঠ করে, তখন আল্লাহতায়ালা তাকে তার বিপদ দূর করে দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে, তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় পাঠ করতেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হাজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি-ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ অর্থ, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমণ্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু।’ (সহিহ্ বুখারি ও মুসলিম)

বিপদের সময় মহানবী (সা.) দোয়াগুলো উম্মতদেরও পাঠ করতে বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (দোয়া ইউনূস) অর্থ, ‘একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (তিরমিজি: ৩৫০০) নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওয়াআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা।’ অর্থ, ‘ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও।’ (ইবনে হিব্বান: ৯৭৪)

মুসলমান হিসেবে আমরা কমবেশি সবাই দোয়া করি। তবে দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন। পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সেই দোয়া কবুল করবেন। বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা, মিনতিভরা কণ্ঠে দোয়া করা, মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। দোয়া সব ইবাদতের মজ্জা ও সারাংশ।

আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফসহ দোয়া করা, ইসমে আজমসহ দোয়া করা উত্তম। ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম। (সুরা বাকারা: ১৬৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো এলাকায় মহামারি (সংক্রামক ব্যাধি) ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। আরও পড়তে পারেন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।

আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করার আগে প্রথমে দরুদ পড়া এবং দরুদ পড়ে দোয়া শেষ করা। কেননা আল্লাহ উভয় দরুদ কবুল করেন।

ফেরদৌস ফয়সাল: প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক
[email protected]