মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, আন্দোলন করতে গেলে সরকার দমন করবে: রিজওয়ানা

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অতীতে দেশের মানুষ জনস্বার্থবিরোধী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছে। কিন্তু এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ২০০ মানুষও একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে সরকার তাদের দমন করবে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘চ্যালেঞ্জেস অব এনার্জি সেক্টর ইমিউনিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের ‘বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট’ এবং ‘স্কুল অব পিপলস ল’ বিকেলে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, গত ১৪-১৫ বছরে সরকার একাধিক খসড়া কয়লানীতি করেছে, কিন্তু একটিও চূড়ান্ত হয়নি। অথচ কোনো নীতিমালা ছাড়াই ২৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করে ফেলেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো গ্রহণযোগ্যতা মানুষের কাছে নেই, এটা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সেমিনারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি ‘২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’কে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে একে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন আইনবিদ। একই সঙ্গে তেল ও গ্যাসভিত্তিক সকল রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে প্রণীত এ আইনের মেয়াদ ছিল দুই বছর। প্রথমে ২০১২ সালে আইনটির কার্যকারিতা দুই বছর এবং ২০১৪ সালে আরও চার বছরের জন্য বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালে আইনটির মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিশেষ বিধানটিকে দেশের আর সব আইনের ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই আইনের বলে দেশের কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প বা বিদ্যুৎ প্রকল্প-সম্পর্কিত সরকারি সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। আইনটি দেশের সংবিধান পরিপন্থী মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকায় আইনটি জনস্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

সেমিনারে বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফওজুল কবির খানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয় সাবেক বিদ্যুৎ সচিব বলেছেন, ‘এ আইনটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু পরে এটি বিদ্যুৎ বিভাগের অদক্ষতার কারণে পরিণত হয়েছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বারবার এর কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।’

সেমিনারে বলা হয়, তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর-রক্ষা জাতীয় কমিটি বহুদিন ধরে এই আইন বাতিল করে দেশীয় সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহারের মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব বিদ্যুৎনীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোটের সদস্যসচিব হাসান মেহেদী প্রমুখ। সেমিনারটি পরিচালনা করেন গ্রোথওয়াচের সমন্বয়ক বিদ্যা দিনকার।