বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি

করোনাকালে রোজগার হারানো গরিব মানুষকে সহায়তার জন্য সরকার মে মাসে বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি নিয়েছিল। কথা ছিল ৫০ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সহায়তা পেয়েছে মাত্র ১৬ লাখ পরিবার। তালিকা তৈরির কাজে নানা অনিয়মের কারণে অন্যরা তা পাননি।

সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় যে এক কোটি মানুষ আছে, এ তালিকা ছিল তার বাইরে। অর্থাৎ যাঁরা অন্য কোনো সহায়তা পান না, তঁারাই বিশেষ সহায়তা পাবেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় এ সহায়তা কর্মসূচির যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সংশ্লিষ্টদের অযোগ্যতা, গাফিলতি ও অসততাই প্রমাণিত হয়েছে। গরিবের জন্য যে সহায়তা দেওয়ার কথা, সেই তালিকায় নাম উঠেছে বাড়ির মালিক, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনের। আছেন সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী এবং পাঁচ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র আছে, এমন ব্যক্তিও।

বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে এ যে তেলেসমাতি কাণ্ড হয়েছে, তাতে অনুমান করা কঠিন নয় যে সরকারের ত্রাণ ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধিকাংশ অপচয় হয়। সরকারের ত্রাণ ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির তালিকা তৈরি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ কর্মসূচির তালিকা তৈরির দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয়েছিল।

যখন কর্মসূচির কাজ চলছিল, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বেশ বড়াই করে বলেছিলেন, অনেক যাচাই–বাছাই করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম–দুর্নীতি হবে না। দুই মাস পর দেখা গেল বহুমাত্রিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। যাচাই–বাছাই করতে গিয়েই বাদ পড়েছে পাঁচ লাখ। এই মহামারির দুঃসময়ে অসহায় গরিব মানুষের সঙ্গে এ কেমন নিষ্ঠুর তামাশা!

দুর্ভাগ্যজনক যে দেশে ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র ও সাড়ে তিন কোটি দরিদ্র মানুষ থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্যভান্ডার নেই। তথ্যভান্ডার থাকলে এ ধরনের তালিকা তৈরি সহজ হতো। সরকারের উচিত এ রকম একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা।

বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল অসহায় ও বিপন্ন মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু সহায়তা দেওয়া। কিন্তু যে জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা দেখেছেন সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ভোটার কি না। শহরের ভোটার নন বলে অনেক শ্রমজীবী বস্তিবাসী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। আবার স্থায়ীভাবে গ্রামে থাকেন না বলে সেখানকার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হননি।

 যেসব জনপ্রতিনিধি ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আর যে সরকারি কর্মকর্তারা দুই মাসেও ৫০ লাখ গরিব মানুষের তালিকা তৈরি করতে পারেননি, তঁাদের পদে থাকার নৈতিক অধিকার আছে কি না, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

আন্তর্জাতিক ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য যেসব তালিকা আছে, সেগুলোর মধ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির তালিকাটি অপেক্ষাকৃত নির্ভরযোগ্য। কেননা, এখানে কাজ করেই অর্থ বা খাদ্য নিতে হয়। করোনাকালে ব্র্যাকসহ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা অতিদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে। সেসব তালিকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।

 অবিলম্বে বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বাকি ৩৪ লাখের সহায়তার অর্থ প্রকৃত গরিবের কাছে পৌঁছানো হোক। প্রয়োজনে সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা নিতে পারে।