সিটি করপোরেশনের কারখানা

রাস্তা তৈরি ও মেরামত করার অল্প কিছুদিন পরেই তা ভেঙেচুরে খানাখন্দ তৈরি হয়। যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, গতি কমে এবং দুর্ভোগ হয়। রিকশাচালক ও যাত্রীদের হাড়গোড়ের পীড়ন চলে। আর এক পশলা বৃষ্টিতেই যখন রাস্তা ডুবে যায়, তখন পানির নিচে অদৃশ্য খানাখন্দগুলো হয়ে ওঠে বিপজ্জনক।

কিন্তু কেন রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজগুলো টেকসই হয় না? নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্মাণ ঠিকাদারদের দিয়ে সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং সংস্কারকাজে গুণগত মান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে চার বছর আগে দুটি প্ল্যান্ট বা কারখানা বসিয়েছে। একটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট, অন্যটি রেডিমিক্স কংক্রিট প্ল্যান্ট। সড়ক কার্পেটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত বালু, পাথর ও পিচের মিশ্রণ তৈরি করা হয় অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে। আর অবকাঠামো নির্মাণে ঢালাইকাজের জন্য পাথরকণা, বালু ও সিমেন্টের মিশ্রণ তৈরি করা হয় রেডিমিক্স কংক্রিট প্ল্যান্ট। ডিএসসিসি ২০১৬ সালে এ দুটি প্ল্যান্ট বসিয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা খরচ করে। তারা ২০১৭ সালে এই মর্মে একটি আদেশ জারি করে যে রাস্তা কার্পেটিং, লেভেলিং, মেরামত ও নির্মাণকাজের গুণগত মান সুষ্ঠু ও যথাযথ রাখার লক্ষ্যে ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চল ও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাধীন সব কাজে করপোরেশনের অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও রেডিমিক্স প্ল্যান্ট বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

কিন্তু গত চার বছরে কোনো ঠিকাদারই ওই প্ল্যান্ট দুটি ব্যবহার করেননি। ফলে নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান নিশ্চিত করার যে উদ্দেশ্যের কথা ডিএসসিসি বলেছিল, তারা তা নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রশ্ন হচ্ছে ঠিকাদারেরা ডিএসসিসির এ আদেশ অমান্য করে কাজগুলো করে যেতে পেরেছেন এবং পারছেন কীভাবে?

প্রথম আলো অনুসন্ধান করে ডিএসসিসির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে, বিভিন্ন কাজের দরপত্র আহ্বানের সময় সংস্থার ওই দুটি প্ল্যান্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুযোগে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মাণসামগ্রী এনে কাজ করেছে এবং এ চর্চাই এখনো চলছে। ফলে কোনো নির্মাণ বা সংস্কারকাজের গুণগত মান বাড়েনি। সমস্যাটি যেখানে ছিল, সেখানেই আছে। অর্থাৎ ডিএসসিসির ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করে প্ল্যান্ট বসানোর কোনো সুফল ফলেনি।

এ বিষয়ে প্রধান দায় ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীর। কিন্তু তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি; বরং তিনি তাঁর নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থাৎ এখানে দুর্নীতির অভিযোগ স্পষ্ট। এ বিষয়ে অবিলম্বে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্ল্যান্ট দুটির শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।