ইউএনও ও তাঁর কমিটিকে অভিনন্দন

দেশজুড়ে সরকার যা করতে পারেনি, নিজেদের উপজেলায় হাকিমপুরবাসী তা করতে পেরেছেন। মাস্ক পরা ও শারীরিক-সামাজিক দূরত্ব পালন বাধ্যতামূলক করাই শুধু নয়, তা বাস্তবায়নও করেছেন। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় এ কারণে করোনার প্রকোপ জেলার আর ১২টি উপজেলা থেকে কম।

হাকিমপুরে কেউ মাস্ক না পরে ঢুকতে বা বেরোতে পারে না, মাস্ক ছাড়া কেনাবেচাও নিষেধ। সামাজিক দূরত্ব মানা সেখানে বাধ্যতামূলক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেখানে করোনা প্রতিরোধ কমিটি কাজ করছে এবং এলাকাবাসীর সুরক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ থাকছে। মার্চের ১০ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত হাকিমপুরে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে আটজন সেরে উঠেছেন এবং কেউ মারা যাননি। উল্লেখ্য, এ উপজেলায় জনসংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার। তুলনায় বাকি উপজেলাগুলোয় আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫৯। সেসব উপজেলার আক্রান্তের সংখ্যা ওপরে ৩৬০ এবং নিম্নে ২৪। পার্থক্যটা আকাশ-পাতাল। বর্তমানে সেখানে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না বলে জানায় জেলার সিভিল সার্জনের দপ্তর।

মুখে মাস্ক পরায় আস্থা নেই অনেকের। অনেকের ধারণা, সামান্য মাস্ক কি এই অতিমারি ঠেকাতে পারবে? সমস্যাটা দৃষ্টিভঙ্গির। করোনাকেন্দ্রিক দৃষ্টির চেয়ে নিজের সুরক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতার দিকে নজর রাখলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক করোনা মোকাবিলা কিছুটা সহজ হয়ে যায়। গোড়া থেকেই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরা এবং জনসমাগম না ঘটানোর দিকে যদি সবার মনোযোগ থাকত, তাহলে বাংলাদেশ হতো পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম অনুসরণীয় দেশ। কিন্তু রোগের পরীক্ষার বেলায় যেমন আমরা প্রায় ব্যর্থ, তেমনি উদাসীন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে। তবে এটাও ঠিক, গ্রামীণ পরিবেশে কিংবা ছোট শহরে যেভাবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-নারায়ণগঞ্জের মতো ঘনবসতির, অভ্যন্তরীণ অভিবাসীপ্রধান শহরে সেটা করা অধিকতর কঠিন। কিন্তু সমাজ সচেতন হলে কী হয়, তার উদাহরণ তো হাকিমপুরের মতো উপজেলা।

হাকিমপুরের সফলতার আরেকটি কারণ রাষ্ট্রের দুর্যোগ মোকাবিলা আইন মেনে চলা। এ আইন অনুসারে জাতীয় দুর্যোগে জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটি কাজ করার কথা, প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব সেখানে বজায় থাকার কথা। হাকিমপুরের ইউএনও আবদুর রফিউল আলম সে অনুসারেই কাজ করছেন। এপ্রিল থেকেই তিনি সেখানে করোনাবিধি মানানোর জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছেন। এ জন্য তিনি ও তাঁর কমিটি অবশ্যই দেশবাসীর অভিনন্দন পাওয়ার দাবিদার।