নাটোরের তরুণের সাফল্য

বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার ডিগ্রি যত বড়, বেকার থাকার ঝুঁকিও তত বড়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ তরুণ-তরুণী শিক্ষাজীবন শেষ করেন; কিন্তু কর্মজীবনে প্রবেশের পথটি তাঁদের জন্য অত্যন্ত বন্ধুর। মনের মতো চাকরি না পেয়ে অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী হতাশায় ভোগেন। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হন কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের তুলনায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা অনেক বেশি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা খারাপ কিছু নয়। তবে বড় ডিগ্রি নিলেই যে চাকরি করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং নিজেই এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়, যার আয় থেকে নিজের পরিবার চালানো তো বটেই, আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও করা যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করার সুযোগ অনেক বেড়েছে। ভারত, চীন, রাশিয়া, ইউক্রেন, এমনকি শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং থেকে বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী অর্থ উপার্জন করছেন। বাংলাদেশেও কিছু তরুণ-যুবক এই পথে হাঁটছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের সংখ্যা বেশ কম। 

সে রকমই বিরল উদ্যোক্তাদের একজন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ১৪ জুলাইয়ের প্রথম আলোয়। মাসুম প্রামাণিক নামের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার এই তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানী প্রথমে ডিপ্লোমা করেছিলেন; তারপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন বটে, তবে সেই ডিগ্রির সনদ দেখিয়ে অন্যের অধীনে চাকরি করার ইচ্ছা তাঁর হয়নি। তিনি তাঁর অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগিয়েছেন আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। কাজের পাশাপাশি চলে প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা, নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর সংগ্রাম। এভাবে একপর্যায়ে তিনি নিজেই খুলে বসেন ‘স্টোরি আইটি’ নামের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করেন ১৬ জন তরুণ-তরুণী। মাসুম প্রামাণিক এই জীবিকা শুরু করেছিলেন পাঁচ মার্কিন ডলার আয় দিয়ে। এখন তিনি প্রতি মাসে আয় করেন চার হাজার মার্কিন ডলার।

তাঁর এই সাফল্যের গল্প আমাদের শিক্ষিত তরুণসমাজের জন্য অনুসরণযোগ্য। তবে সে জন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। শুধু চাকরি পাওয়ার আশায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি নেওয়া নয়, নিজেকে দক্ষ করে তোলার উপযোগী শিক্ষা নেওয়া এবং সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল কর্ম–উদ্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইচ্ছা শক্তি চাই।