করোনা থেকে শিক্ষা না নিলে ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না

>
আশরাফ দেওয়ান
আশরাফ দেওয়ান
আশরাফ দেওয়ান, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বৈশ্বিক পরিবর্তন, স্বাস্থ্যভূগোল বিভাগে ১১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। ৪৭ বছর বয়সী এই গবেষক এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। একই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি জাপানের ওকাইয়ামা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ও নাগোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্বখ্যাত স্প্রিংগার প্রকাশনী থেকে তাঁর ‘ঢাকা মেগাসিটি’ ও ‘ফ্লাড ইন মেগাসিটি’ নামে দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জার্নালগুলোয় তার ১০৪টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও ঢাকার তাপমাত্রা এবং বজ্রপাত নিয়ে তিনি এখন গবেষণা করছেন। এ ছাড়া পরিবেশ, নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ

প্রথম আলো: করোনার এই সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পরিবেশের জন্য অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
আশরাফ দেওয়ান: হ্যাঁ, এক অর্থে তা ঠিক। দেশের সমুদ্র ও নদীগুলোতে ডলফিন–কচ্ছপসহ নানা প্রাণী ফিরে আসতে শুরু করেছে। অবশ্য যে জায়গাগুলোয় তারা ফিরছে, সেগুলো একসময় তাদেরই জায়গা ছিল। ঢাকার বায়ুর মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। নদীর দূষণ ও কিছুটা কমেছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পরিবেশের এই পরিবর্তন কিছুটা কম। অবশ্য এর বাস্তব কারণও আছে। বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের জন্য যে বিপুল অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে, তার জন্য ইটভাটাগুলো বছরের বেশির ভাগ সময় চালু থাকছে। আর বেশির ভাগ ইটভাটা পরিবেশের নিয়ম না মেনে দূষণ চালিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নিতে দেখি না। অন্যদিকে এই ছোট্ট ভূখণ্ডে বিপুল পরিমাণে জনসংখ্যা এবং তাদের যাতায়াতের জন্য প্রচুর যানবাহন চলছে। কিন্তু যানবাহনগুলোর দূষণ নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশের অবস্থা দিনকে দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছিল। করোনা এসে সেখানে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পারল।

প্রথম আলো: এখান থেকে তাহলে আমরা কী শিক্ষা নিলাম? উন্নত বিশ্ব কী করল?
আশরাফ দেওয়ান: বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে শিল্পোন্নত দেশগুলো করোনা থেকে নেওয়া শিক্ষাকে একটু অন্যভাবে দেখছে। কয়েক যুগ ধরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ও নানা আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব নেতৃত্ব এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ায় জন্য করা প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নে খুব বেশি অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু সেটা যে অসম্ভব না, করোনা এসে তা বুঝিয়ে দিল। তিন মাসের মধ্যে বিশ্বের বায়ুর মান যত দ্রুত উন্নতি হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ও নাইট্রোজেনের পরিমাণ যত দ্রুত কমল, তা সত্যি অভাবনীয়।

প্রথম আলো: কোনো দেশ কী এই পরিবর্তনকে তাদের নীতি ও পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আশরাফ দেওয়ান: হ্যাঁ তা ঠিক, কোনো দেশ তা এখনো করেনি। এসব দেশ তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও চিন্তার পুনর্বিন্যাসে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে এসব দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ ও পরিবেশ সুরক্ষার কর্মীরা এই পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছেন। তাঁরা এ নিয়ে লড়াই শুরু করছেন। তাঁরা রাষ্ট্রগুলোর নীতিকাঠামোয় তা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ আমরা সেটা দেখছি না। এদিক থেকে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি হতাশাজনক।

প্রথম আলো: বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের হিসেবে গত বছরের তুলনায় করোনার সময়ে ৫২ শতাংশ বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।
আশরাফ দেওয়ান: বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও করোনার সময়ে বন ধ্বংস ও বণ্য প্রাণী হত্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আমরা দেখেছি। কারণ, এগুলো বনভূমির মতো জনগণের সম্পত্তিকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করার পুরোনো প্রক্রিয়ার অংশ। এই সময়ে পুঁজিপতি ও লোভি ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের বন রক্ষায় নিষ্ক্রিয়তা ও মানুষের ঘরে থাকার সুযোগ নিচ্ছে। ফলে এর মধ্য দিয়ে আমরা দেখলাম রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা পরিবেশের জন্য ভালো ও বন সুরক্ষার ক্ষেত্রে খারাপ ফলাফল নিয়ে এসেছে।

প্রথম আলো: মানুষ আর বনাঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব কমে যাওয়ার কারণেই তো করোনার মতো মহামারি ছড়াচ্ছে।
আশরাফ দেওয়ান: হ্যাঁ, করোনা সংক্রমণের পেছনে বনভূমি ধ্বংস ও বন্য প্রাণী হত্যার সরাসরি সম্পর্ক আছে। মানুষ আর বনাঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব কমে যাওয়ায় এর আগেও প্লেগ, সোয়াইন ফ্লু, সার্স ভাইরাসের মতো রোগ ছড়িয়েছে। করোনা ছড়ানোর পেছনেও বাদুড় ও বনরুইকে দায়ী করা হচ্ছে। ফলে এখন বিশ্ববাসীর সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে, নাকি প্রকৃতিকে রক্ষা করে নিজেদের উন্নয়ন করবে।

প্রথম আলো: ঢাকার জীবনযাত্রা তো আগের মতো হয়ে উঠছে। করোনাশিক্ষাকে আমলে নিয়ে এই শহরকে কীভাবে ঠিক করা যেতে পারে?
আশরাফ দেওয়ান: করোনার সময় ঢাকার পরিবেশের যে কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে উঠলে তা আবার আগের অবস্থায় চলে যেতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। এ থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে আমাদের নগর ব্যবস্থাপনা ঠিক করা। আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা কোনো জিনিস নির্মাণ করার পর তদারকি ঠিকমতো করি না। পরিকল্পনার কোনো ধারাবাহিকতা ও কার্যকর বাস্তবায়নও দেখি না। মানুষের মধ্যেও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আছে।

প্রথম আলো: এই শহরের মূল সমস্যাটা কোথায়?
আশরাফ দেওয়ান: ঢাকা শহরের নগর ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রয়েছে, তারা শহরের ভবনগুলোর নকশা অনুমোদন দিচ্ছে। আবার নিজেরাও জলাভূমি ভরাট করে প্রকৃতি ধ্বংস করে পূর্বাচলের মতো বড় শহর নির্মাণ করছি। সেটাও ঠিকমতো পারছি না।
এর আগে ধানমন্ডি ও আশপাশসহ বিভিন্ন উপশহর গড়ে তোলার পর ঠিক করা হয়েছিল, সেখানে ছয়তলার ওপরে ভবন গড়া যাবে না। এই নির্দেশনা তারা দিয়েছিল। সেটাও এখন কেউ মানছে না। রাজউকও এ নিয়ে কিছু বলছে না। এতে যেটা হচ্ছে শহরে বসতি, দূষণ ও যানবাহন এবং জ্যাম যেমন বাড়ছে, তেমনি বায়ুপ্রবাহ, সূর্যের আলো আসা–যাওয়া ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
এই তিনটি প্রাকৃতিক বিষয় সঠিকভাবে কাজ না করলে ঘরের পরিবেশ ও বসবাসের অবস্থা ভালো থাকে না। যেমন ঢাকার ভবনগুলো এমনভাবে হচ্ছে যে বায়ুপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সূর্যের আলো শহরে দ্রুত প্রবেশ করছে কিন্তু শহরের বেশির ভাগ ভবন বহুতল হয়ে যাওয়ায় ও তা কাচ দিয়ে ঘেরা হয়ে যাচ্ছে। এতে শহরটিতে প্রবেশ করা সূর্যের তাপ ভবনের ভেতরে ও বাইরে ঢুকে জমে থাকছে। এই উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য শহরগুলোর ভবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছে। সেই যন্ত্র ঘরের ভেতরটিকে ঠান্ডা করছে কিন্তু তাপ বেরিয়ে বাইরের অংশটিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

প্রথম আলো: বিষয়টিকে আরেকটু খুলে বলুন।
আশরাফ দেওয়ান: আমি আমার এক গবেষণায় দেখেছি মতিঝিলের তাপমাত্রা ঢাকার অন্যান্য স্থানের তাপমাত্রার চেয়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। কারণ ওই এলাকায় প্রচুর বহুতল ভবন, যার প্রায় সবগুলোয় শত শত শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপন করা আছে। আর সেখানে কোনো জলাশয় ও বৃক্ষ নেই।

প্রথম আলো: রাজউক এখানে কী করতে পারে?
আশরাফ দেওয়ান: রাজউকের আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া। তাদের ওখানে মাসে ৯০ হাজার নতুন ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু তাদের সক্ষমতা আছে মাত্র ৩ হাজার ৭৫০টি ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়ার। এর বেশি করার জনবল ও দক্ষতা তাদের নেই। ফলে আবেদন করা অন্য ভবনগুলোর মালিকেরা তো আর বসে থাকেন না। তাঁরা নকশা ছাড়াই অন্য কোনো উপায়ে ভবন নির্মাণ করছেন। ফলে শহরটি ভূমিকম্প ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির জন্য তৈরি হচ্ছে।

প্রথম আলো: ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পাগুলো তাহলে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে?
আশরাফ দেওয়ান: শহরের জন্য এর আগের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর বেশির ভাগই ভন্ডুল হয়ে গেছে। যেমন ধরেন ডিএনডি বাঁধ এলাকা গড়ে তোলা হয়েছিল কৃষিকাজের জন্য। কিন্তু সেখানকার নিচু জলাভূমিগুলো ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে সেখানে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপরই সেখানকার সব জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। এখন পূর্বাঞ্চলেও একই চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি।
অথচ বিশ্বের অনেক শহর নিয়ে আমি গবেষণা করেছি। দেখেছি ঢাকার মতো এত এত সুন্দর প্রাকৃতিক পানি ব্যবস্থাপনাসমৃদ্ধ শহর বিশ্বের আর কোথাও নেই। এর পাশে পাঁচটি নদী ও কয়েক শ খাল সহজে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করত। এখানে কেন জলাবদ্ধতা হবে। কিন্তু ওই নেটওয়ার্কের পুরোটাই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে একদিকে বায়ুদূষণ অন্য দিকে নদীদূষণ–দখল এবং শুকিয়ে ফেলার মাধ্যমে এখানে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। ফলে এই শহরটি বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামনে এমনও দিন আসতে পারে এই শহরটিকে হয়তো বসবাসের জন্য পুরোপুরি অযোগ্য শহর হিসেবে ঘোষণা করা দরকার হতে পারে।

প্রথম আলো: এ থেকে তাহলে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন?
আশরাফ দেওয়ান: অবশ্যই এখনো উপায় আছে। সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। করোনা থেকেই যদি আমরা শিক্ষা নিই, তাহলেই এই শহরটিকে বাঁচানো সম্ভব। আপনি যদি শুধু ঢাকায় দশতলার নিচের ভবনগুলোর ছাদে ছাদ বাগান তৈরি করেন। তাহলেই অনেক পরিবর্তন সম্ভব। আমরা হিসাব করে দেখেছি ছাদবাগান হলেই শহরের তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। এতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার অনেক কমে আসবে। শুধু তা–ই নয়, এই শহরে পরিবেশসম্মত বিনোদন কেন্দ্রের ঘাটতি আছে। বাগানগুলো তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে। একই সঙ্গে সেটি পারিবারিক সবজি ও ফলমূল জোগানের একটি বড় উৎস হতে পারে।
এখন যারা এই শহর পরিচালনায় মেয়রের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। এটি একটি বাস্তবায়নযোগ্য সমাধান। এ ছাড়া শহরের যেসব জলাশয় এখনো টিকে আছে, সেগুলোতে দ্রুত রক্ষা করতে হবে। শহরের মধ্যে একসময় প্রচুর পুকুর ছিল, সেগুলো আবারও খনন করতে হবে। এখনো শহরের অনেক স্থানে গাছ লাগানোর সুযোগ আছে। সেটি করা যেতে পারে। নব্বইয়ের দশকে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে গাছ লাগালে এবং দুই বছর তা লালন–পালন করলে টাকা দেওয়া হবে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এতে ওই সময়ে অনেক গাছ রোপণ করা হয়। এখন শহরের সড়কের দুই পাশে যত বড় গাছ দেখি তার বেশির ভাগই ওই সময়ের। ঢাকার নদীগুলো সঙ্গে খালের সংযোগ স্থাপন করা উচিত। নয়তো এ বছরও শহরের জলাবদ্ধতা থেকে আমাদের মুক্তির কোনো উপায় নেই।

প্রথম আলো: অন্য দেশগুলো কীভাবে শহরের পরিবেশ সুরক্ষা করছে? বাংলাদেশে কি তা সম্ভব?
আশরাফ দেওয়ান: যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় আমি দেখেছি নদীগুলোর দুই পাশের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ করতে দেওয়া হয় না। স্থানটি নাগরিকদের জন্য বিনোদন ও ব্যায়ামের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। কলকাতার মতো শহরেও গঙ্গা নদী সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ আমরা দেখেছি। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডেও শহরের নদীগুলোকে প্রাণ ফিরিয়ে আনা হয়েছ। আমরা কবে থেকে শুনছি বুড়িগঙ্গাসহ চারটি নদীকে দূষণমুক্ত করে নাগরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। এখনো তো কিছু দেখছি না।

প্রথম আলো: আমাদের এখানে হাতিরঝিলের মতো বড় প্রকল্প তো হতে দেখলাম।
আশরাফ দেওয়ান: হাতিরঝিলের মতো বড় প্রকল্প হয়েছে কিন্তু এ ধরনের প্রকল্পের বড় দুর্বলতা হচ্ছে এই অবকাঠামো ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। ফলে শহরের বুকে এত বিশাল একটি সুন্দর অবকাঠামো বেশির ভাগ সময় ব্যবহার হয় যানবাহন চলাচলের জন্য। দুই পাশের অধিবাসীরাও এই লেকে আর সময় কাটাতে পারেন না। পানি দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে।

প্রথম আলা: ঢাকা শহর নিয়ে তো এখনো অনেক পরিকল্পনা হচ্ছে?
আশরাফ দেওয়ান: অনেক পরিকল্পনা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যাটি রয়ে গেছে। ঢাকার জন্য আরেকটি বিশদ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে সেখানে আমলে নেওয়া হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। ফলে পোকামাকড়–রোগবালাই বাড়তে শুরু করেছে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ এখানে বাড়ছে। কারণ এখানে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মশা–মাছি ও অন্যান্য জীবাণু এবং কীটপতঙ্গের সংখ্যা বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আর মানুষের বসবাসের পরিবেশ কমে আসছে।
তবে আমি যেটা দেখি, বাংলাদেশের মানুষ গরিব, সম্পদের অভাবে না। ঢাকার পরিবেশ খারাপ হচ্ছে প্রাকৃতিক কারণে না। আমরা আমাদের সম্পদগুলোকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছি না ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে। সেটি ঠিক করলে ও শাসনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলে সবকিছুই ঠিক করা সম্ভব।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আশরাফ দেওয়ান: আপনাকেও ধন্যবাদ।