মির্জাগঞ্জে তরুণদের উদ্যোগ

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার একটি মাটির সড়ক। একটি বাজার থেকে শুরু হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বড় সড়কে মিলেছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাসহ আশপাশের পাঁচটি গ্রামের ১০-১২ হাজার মানুষ। সড়কটি বর্ষা মৌসুমজুড়ে কাদায় একাকার হয়ে থাকে। তখন কোনো যানবাহন দূরে থাক, হেঁটে চলাচল করাও ভীষণ কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাঁরা তঁাদের এ কষ্টের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন। তঁারা সড়কটি পাকা করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু তঁাদের আবেদন-নিবেদন জনপ্রতিনিধিদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি।

অবশেষে মির্জাগঞ্জ উপজেলার ‘পিঁপড়াখালী’ ও আশপাশের গ্রামের তরুণ-যুবকেরা নিজেদের উদ্যোগেই সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগের জন্য সংগঠিত হওয়ার কাজে তাঁরা বেশ সৃজনশীল এক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। ফেসবুকে খুলেছেন ‘পিঁপড়াখালী পরিবার’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ। ওই গ্রুপের পাতায় সড়কটির দুরবস্থা বর্ণনা করে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা মেরামত করার উদ্দেশ্য প্রচার করা হয়। তারপর খোলা হয় ‘পিঁপড়াখালী পরিবার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা ভার্চ্যুয়াল জগৎ থেকে বেরিয়ে বাস্তব কাজের জগতে তরুণ-যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে। তাঁরা নিজেদের সাধ্যমতো চাঁদা দিয়ে তহবিল সংগ্রহ করেন। ওই এলাকার যেসব মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি করেন; তাঁরাও অর্থ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। তরুণেরা সড়ক মেরামতের জন্য বালু কিনেছেন, আটজন পেশাদার শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কোদাল নিয়ে নিজেরাও নেমে পড়েছেন সড়কটি মেরামতের কাজে।

ওই তরুণ-যুবকেরা জানেন, মাটি ও বালু দিয়ে সড়কটিতে তৈরি হওয়া খানাখন্দ বন্ধ করলেই সেটি এই বর্ষা মৌসুমে চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগী হবে না। তাঁদের এ স্বেচ্ছাশ্রমের উদ্দেশ্য বর্তমানের শোচনীয় দুর্দশা কিছুটা লাঘব করা। আসলে প্রয়োজন সড়কটি পাকা করা; তরুণদের চাঁদার টাকায় সেটা সম্ভব নয়। তবে তাঁদের এ উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের টনক নড়বে এমন ইঙ্গিত মিলেছে। মির্জাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, ওই সড়ক পাকা করার জন্য বৃহত্তর পটুয়াখালীর উন্নয়ন প্রকল্প (বরগুনা-পটুয়াখালী)-২ এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর উপজেলা প্রকৌশলী তরুণদের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, সড়কটি প্রকল্পের আওতায় এনে পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তরুণদের এ উদ্যোগ নেওয়ার আগেই জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী হওয়া উচিত ছিল। কারণ, এ দায়িত্ব তঁাদেরই। এখন তঁাদের আশ্বাস যেন পূরণ হয়, সে জন্য তরুণদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।